
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র পল্টনে মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দুই সদস্য। বুধবার (১৮ জুন) দিবাগত রাত ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে পল্টন থানা এলাকার পুলিশ হাসপাতালের বিপরীত পাশে এ ঘটনা ঘটে, যা মুহূর্তেই উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয় পুরো এলাকায়। পুলিশের ধারণা, ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং মাদক কারবারিরা পুলিশের গতিবিধি সম্পর্কে আগে থেকেই অবহিত ছিল।
গুলিবিদ্ধ দুই পুলিশ সদস্য হলেন—ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের গোয়েন্দা শাখার উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) আতিক হাসান ও কনস্টেবল সুজন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের রাত আড়াইটার দিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জরুরি বিভাগের ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি কেয়ার ইউনিটে (ওসেক) এএসআই আতিক হাসানকে ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীরের পেটের বাম পাশে গুলি লেগেছে এবং তিনি বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন। অন্যদিকে কনস্টেবল সুজনের বাঁ পায়ের হাঁটুতে গুলি লেগেছে এবং তাকে ঢামেকের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ডিবি পুলিশের সূত্র জানায়, বুধবার রাতে লালবাগ গোয়েন্দা বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) এনায়েত কবির শোয়েবের নেতৃত্বে একটি ডিবির বিশেষ টিম মাদক কারবারিদের গোপন গতিবিধির খোঁজে পল্টন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। তারা আগে থেকেই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন, একটি প্রাইভেট কারে করে মাদক বহন করা হচ্ছে এবং সেটি পল্টন এলাকায় অবস্থান করছে। অভিযানের একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা সন্দেহভাজন প্রাইভেট কারটিকে থামাতে চেষ্টা করে। গাড়িটি থামানোর সাথে সাথে গাড়ির ভেতর থাকা মাদক ব্যবসায়ীরা কোনো রকম সতর্কতা ছাড়াই পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।
এই আকস্মিক হামলায় এএসআই আতিক হাসান ও কনস্টেবল সুজন গুলিবিদ্ধ হন। এতে গোটা অভিযানে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। তবে সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গুলিবিদ্ধদের দ্রুত উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যান এবং ঘটনাস্থল থেকে পালানোর চেষ্টা করা তিন মাদক কারবারিকে প্রাইভেট কারসহ আটক করেন। তাদের কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ আলম জানান, ‘আহত দুই পুলিশ সদস্যকে রাতেই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসকরা জানান, এএসআই আতিক হাসানের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বৃহস্পতিবার সকালে তার অস্ত্রোপচার করা হবে। কনস্টেবল সুজনের আঘাত গুরুতর নয়, তবে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে।’
ঘটনার পর পুলিশের একাধিক ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে এবং একটি প্রাইভেট কারসহ তিনজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে। আটককৃতদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ না করলেও জানা গেছে, তাদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও একটি বড় ধরনের মাদক চালান জব্দ করা হয়েছে। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মাদক চক্রের পেছনের মূল হোতাদের নাম বের করার চেষ্টা চলছে।
লালবাগ গোয়েন্দা বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার এনায়েত কবির শোয়েব বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা রাতে অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানের সময় গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আগেই মাদক কারবারিরা গুলি চালায়। এতে আমাদের দুই পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।’
রাজধানীতে সম্প্রতি মাদকের বিস্তার এবং মাদকচক্রের আগ্রাসী মনোভাব পুলিশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব চক্র এখন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অভিযানকারীদের প্রতিরোধ করার মত মনোভাব নিচ্ছে, যা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য উদ্বেগজনক।
পুলিশ সদরদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হবে এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব সরকার নেবে বলেও জানানো হয়েছে।
পল্টনের এই ঘটনা শুধু একটি অভিযানের অংশ নয়, বরং মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুলিশের জীবনবাজি রেখে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত। গুলিবিদ্ধ এএসআই আতিক হাসান ও কনস্টেবল সুজন এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের সুস্থতা কামনার পাশাপাশি এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির জন্য পুলিশ সদরদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করছে। এ ঘটনায় জনমনে আবারও প্রশ্ন জেগেছে—মাদকবিরোধী যুদ্ধে আমরা কতটা প্রস্তুত?
বাংলাবার্তা/এমএইচ