
ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছী রেলস্টেশনে দীর্ঘদিন ধরে স্টপেজ না থাকা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে স্থানীয় মানুষদের ক্ষোভ চরমে উঠেছে। এরই প্রেক্ষিতে আজ বুধবার (১১ জুন) ভোর থেকে শুরু হয়েছে ব্যাপক রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি। স্থানীয় হাজারো মানুষ প্ল্যাকার্ড, বাঁশ ও গাছের গুঁড়ি দিয়ে রেললাইনে ব্যারিকেড গড়ে বিক্ষোভে অংশ নেন। আন্দোলনকারীদের এই অবরোধ কর্মসূচির কারণে রাজশাহী রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া খুলনাগামী আন্তঃনগর 'সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস' ট্রেন আটকে গেছে নন্দনগাছী স্টেশন সংলগ্ন রেললাইনে। এর ফলে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রধান রেলজংশন রাজশাহী থেকে সারাদেশের সঙ্গে সব ধরনের ট্রেন যোগাযোগ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, বহু বছর ধরে তারা নন্দনগাছী স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি (স্টপেজ) দাবি করে আসছেন। অথচ বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও রেল কর্তৃপক্ষ কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সেই সঙ্গে স্টেশনের পরিকাঠামোও দিন দিন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। নেই সঠিক যাত্রীসেবা, নেই সুরক্ষিত প্ল্যাটফর্ম কিংবা আলো-বাতাসের সুব্যবস্থা। এতে করে চারঘাট, বাঘা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার হাজার হাজার যাত্রী প্রতিদিন বিপাকে পড়ছেন।
নন্দনগাছী এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, "আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি, চিঠি দিয়েছি, মানববন্ধন করেছি। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি। আজ বাধ্য হয়েই রেললাইনে নামতে হলো।"
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক রোজিনা খাতুন বলেন, "ছাত্রছাত্রীদের জন্য ট্রেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাহন। কিন্তু এই স্টেশনের অবস্থা ভয়াবহ। আমাদের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক— স্টপেজ দিতে হবে এবং স্টেশন আধুনিকায়ন করতে হবে।"
অবরোধ শুরু হওয়ার পরপরই রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী আন্তঃনগর সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ট্রেন নন্দনগাছী স্টেশনের পূর্ব পাশে থেমে যায়। যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেনে বসে থাকতে হচ্ছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অবরোধ না উঠা পর্যন্ত তারা ট্রেন চালাতে পারছেন না। অন্যদিকে রুটে চলাচলকারী অন্যান্য ট্রেনগুলোও বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়েছে।
এদিকে সকাল থেকেই স্থানীয় প্রশাসন ও রেল কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। তবে বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, দাবি পূরণে লিখিত ও নির্দিষ্ট সময়সীমার প্রতিশ্রুতি ছাড়া তারা অবরোধ প্রত্যাহার করবেন না। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসন ও রেলওয়ের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাজশাহী রেলওয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, "আমরা স্থানীয়দের দাবির কথা শুনেছি। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে প্রশাসন কাজ করছে। তবে অবরোধ তোলা না হলে দেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলযোগাযোগ চরমভাবে ব্যাহত হতে পারে।"
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, ২০২১ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে নন্দনগাছী স্টেশনে ট্রেনের স্টপেজ এবং স্টেশন সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল শিগগিরই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ও ট্রেন থামানোর নির্দেশনা দেওয়া হবে। কিন্তু আজও সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপ নেয়নি।
এই অবরোধ কর্মসূচি শুধু স্থানীয়ভাবে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর ভিডিও, ছবি ও প্রতিবাদী বক্তব্য ভাইরাল হচ্ছে। স্থানীয় ছাত্রসংগঠন, সাংস্কৃতিক কর্মী এবং সাধারণ নাগরিকরা এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছেন। অনেকে বলছেন, অবহেলিত অঞ্চলগুলোর প্রতি রেল মন্ত্রণালয়ের এই আচরণ বৈষম্যমূলক।
এখন সবার চোখ প্রশাসন ও রেল কর্তৃপক্ষের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। অবরোধ কতক্ষণ চলবে, কতটা দীর্ঘ হবে রাজশাহীর রেল যোগাযোগের অচলাবস্থা—তা নির্ভর করছে কত দ্রুত এবং কীভাবে আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নেওয়া হয় তার ওপর।
বাংলাবার্তা/এমএইচ