
ছবি: সংগৃহীত
সরকার আসন্ন ৫ আগস্টের আগেই বহুল প্রতীক্ষিত জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ঘোষণাপত্র তৈরির কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। তবে কবে নাগাদ এটি প্রকাশিত হবে—সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ না জানালেও তিনি বলেন, “৫ আগস্টের আগেই আমরা এটি প্রকাশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।” তিনি আরও জানান, খুব শিগগিরই প্রকাশের নির্দিষ্ট তারিখ সাংবাদিকদের জানিয়ে দেওয়া হবে।
ঘোষণাপত্র তৈরির বিষয়টি একতরফাভাবে হচ্ছে না—এই বার্তা দিতে গিয়ে প্রেস সচিব বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রণয়ন এবং চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার আগে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পরামর্শ ও আলোচনার ধারা অব্যাহত রয়েছে।” সরকার জাতীয় ঐকমত্য ও অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক পরিসর তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীর মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সূত্র মতে, ঘোষণাপত্রে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের রূপরেখা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এর মধ্যে গণতন্ত্রের ভিত্তিমূল শক্তিশালীকরণ, নির্বাচন ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা, মানবাধিকার সুরক্ষা, ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ, এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার স্থান পাবে। বিশেষভাবে জোর দেওয়া হবে স্থিতিশীল অর্থনীতি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং তরুণ সমাজের অংশগ্রহণমূলক উন্নয়নে।
ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম আরও জানান, উপদেষ্টা পরিষদের সাম্প্রতিক এক বৈঠকে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই দুই প্রতিষ্ঠানকে সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে এনে আরও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে চায় সরকার।
এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একটি নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার আহ্বায়ক করা হয়েছে বিশিষ্ট গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সিআর আবরারকে। তাঁর নেতৃত্বে কমিটি শিগগিরই একটি সুপারিশমালা প্রস্তুত করবে, যেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সম্পাদকীয় স্বকীয়তা, এবং জবাবদিহিতার কাঠামো নির্ধারণ করা হবে।
জুলাই ঘোষণাপত্র ঘিরে রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ঘোষণাপত্রে তাদের দাবির প্রতিফলন দেখতে চায়। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, এটি হবে 'জনগণের প্রত্যাশা ও ভবিষ্যতের রূপরেখা'র একটি পূর্ণাঙ্গ দলিল।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘোষণাপত্রই হতে যাচ্ছে চলমান রাজনৈতিক রূপান্তরের মূল ভিত্তি। আগামী জাতীয় নির্বাচন, প্রশাসনিক কাঠামো, এবং নাগরিক অধিকার নিয়ে যেসব বিতর্ক চলছে, সেসবের সমাধান বা দিকনির্দেশনা থাকবে এই ঘোষণাপত্রে।
তবে, সকল মহলে গ্রহণযোগ্যতা পেতে হলে ঘোষণাপত্রের ভাষা ও বাস্তবায়নযোগ্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে বলেও মত দিয়েছেন নীতিনির্ধারক মহল। শফিকুল আলম বলেন, “আমরা এমন একটি দলিল তৈরি করতে চাই যা রাজনৈতিক বিভাজন নয়, বরং সংলাপ ও সমঝোতার পরিবেশ তৈরি করবে।”
সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময় পেরিয়ে একটি দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা এবং অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের পথে যাত্রার ঘোষণা হতে যাচ্ছে এই জুলাই ঘোষণাপত্র। সংশ্লিষ্ট মহলের ভাষ্য, এটি নিছক রাজনৈতিক দলিল নয়, বরং একটি ‘জাতীয় প্রতিশ্রুতি’—যার মাধ্যমে ভবিষ্যতের পথচিত্র নির্ধারণ করা হবে।
তাই আগ্রহভরে অপেক্ষা করছে দেশবাসী—কি থাকবে এই ঘোষণাপত্রে, কতটা পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেবে সরকার, আর সেই প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়নযোগ্য হবে।
আরও কিছু দিনের মধ্যেই সেই অপেক্ষার অবসান ঘটবে—৫ আগস্টের আগেই ঘোষণা আসছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ