
ছবি: সংগৃহীত
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছে ইসরাইল। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, খামেনিকে ‘শেষ করে দেওয়া’ই এখন ইসরাইলের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। তিনি দাবি করেন, খামেনির মতো ব্যক্তি সবসময়ই ইরানের ছায়া যুদ্ধের নীতির ধারক ছিলেন, যিনি হিজবুল্লাহ, হামাসসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক গোষ্ঠী ব্যবহার করে ইসরাইলকে ধ্বংস করতে চেয়েছেন।
বিষয়টি এখন আর শুধু রাজনৈতিক অবস্থান বা প্রতিরক্ষা কৌশল নয়, বরং সরাসরি একটি হত্যার হুমকি। ইসরাইলের পক্ষ থেকে আগে বলা হয়েছিল, তাদের লক্ষ্য ইরানে সরকার পরিবর্তন। কিন্তু এখন তা আরও উগ্র রূপ নিয়েছে—সরাসরি ইরানের সর্বোচ্চ নেতার শারীরিক নির্মূলের আহ্বান জানানো হচ্ছে।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, "এই লোকটি আমাদের আক্রমণ করছে। তাকে নির্মূল করা দরকার। কারণ এর আগেও সে ইসরাইল ধ্বংসের হুমকি দিয়ে এসেছে। এমন ব্যক্তিকে আমরা আর সহ্য করব না।" আন্তর্জাতিক সম্প্রচারমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
শুধু প্রতিরক্ষামন্ত্রী নয়, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও এই হামলার ব্যাপারে কৌশলী এবং উসকানিমূলক বার্তা দিয়েছেন। তিনি শুক্রবার এক ইংরেজি ভিডিও বার্তায় ইরানের জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমি আশা করি এই সামরিক অভিযান তোমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথ পরিষ্কার করে দেবে।” বিশ্লেষকদের মতে, এটি ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের একটি প্রকাশ্য চেষ্টা, যা কেবল পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।
অন্যদিকে, এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রও একপ্রকার চাপের মধ্যে রয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'ট্রুথ সোশাল'-এ এক পোস্টে সরাসরি ইঙ্গিত করেছেন, খামেনির অবস্থান সম্পর্কে তাদের গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা জানি সে কোথায় লুকিয়ে আছে। আমরা এখনই তাকে হত্যা করতে চাই না। তবে আমাদের ধৈর্য দিনদিন ফুরিয়ে যাচ্ছে।”
এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের মন্তব্য ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের এসব বক্তব্য এবং পদক্ষেপের পর ইরানের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম এবং রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে, ইরান এই ধরনের ‘টার্গেট কিলিং’-এর হুমকিকে যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে বিবেচনা করবে।
ইরানের বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা এখন সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া, চীন এবং অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তিগুলোর কূটনৈতিক সক্রিয়তাও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
উল্লেখ্য, শুক্রবার থেকে ইসরাইল ইরানে নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করেছে, যার প্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র এরইমধ্যে মধ্যপ্রাচ্য থেকে কিছু বিমান ও যুদ্ধজাহাজ সরিয়ে নিয়েছে। পেন্টাগনের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইরান থেকে প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া যায়, ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে যেভাবে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, তা কেবল এক দেশকে নয়, পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। এই ভাষাগত ও সামরিক আগ্রাসনের উত্তরে ইরানের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তা নির্ধারণ করবে মধ্যপ্রাচ্যের আগামী দিনের শান্তি বা যুদ্ধের ভবিষ্যৎ।
এদিকে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে একের পর এক সতর্কবার্তা আসতে শুরু করেছে—কারণ এই উত্তেজনা শুধু একটি অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর অভিঘাত পড়তে পারে গোটা বিশ্বে, বিশেষ করে যখন পারমাণবিক সক্ষমতা ও ধর্মীয় মৌলবাদ উভয়েরই অনিবার্য উপস্থিতি রয়েছে এ সংঘাতে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ