
ছবি: সংগৃহীত
ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোতে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার আনার লক্ষ্যেই একাধিক কমিশন গঠন করে চলেছে। এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এবার সেই কমিশনের আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, যা দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় গতিশীলতা ও জবাবদিহিতা আনতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
গত ১৬ জুন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া। এতে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের দেওয়া তৎকালীন সময়ে বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশসমূহ দ্রুত কার্যকর করার বিষয়ে একমত হন সবাই।
সভায় জানানো হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে ছয়টি প্রধান কমিশনসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এই কমিশনগুলো ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে খসড়া সুপারিশ তৈরি করে সরকারের কাছে দাখিল করেছে। এর মধ্যে কিছু প্রস্তাব রয়েছে যেগুলো সংবিধান সংশোধন বা বৃহৎ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এসব বিষয়ে এখন ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’-এর মাধ্যমে ব্যাপক পরামর্শ গ্রহণ চলছে।
তবে যেসব সুপারিশ শুধু প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগগুলোর নিজস্ব উদ্যোগেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলোকে আর বিলম্ব না করে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে—এমন নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। অর্থাৎ, যেসব বিষয়ে সাংবিধানিক সংশোধনের প্রয়োজন নেই বা রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠনের প্রয়োজন পড়ে না, সেসব খাতে সংস্কার কাজ যেন থেমে না থাকে, সেটি নিশ্চিত করাই এই নির্দেশনার মূল লক্ষ্য।
এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রশাসনে পদোন্নতি, নিয়োগ, বদলি, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা, ই-গভর্নেন্স, কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন ও নাগরিক সেবার মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে সাধারণ জনগণের সঙ্গে সরকারি দফতরের দূরত্ব কমবে এবং জনসেবা হবে আরও দ্রুত ও কার্যকর।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহের মধ্য থেকে কোন কোন সুপারিশ ‘দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য’, আর কোনগুলো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে, তা নির্ধারণের জন্য একটি পৃথক ওয়ার্কিং গ্রুপও গঠন করা হচ্ছে।
এছাড়াও প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে তারা যেন নিজেরাই নিজেদের প্রশাসনিক কাঠামো, দক্ষতা ঘাটতি, সেবা প্রদান প্রক্রিয়াসহ নানা বিষয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আত্মমূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক পদক্ষেপের সুপারিশ করে।
জনপ্রশাসনের সংস্কারে সরকারের এমন উদ্যোগ প্রশাসনের অভ্যন্তরে যেমন নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে, তেমনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর সঠিক বাস্তবায়নই হবে আসল চ্যালেঞ্জ। অতীতে বহুবার এমন সংস্কারের ঘোষণা এলেও তার বাস্তব রূপায়ন হয়নি। তবে এইবার জনগণের সরাসরি প্রত্যাশা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনের কারণে সরকার যেন বাস্তবায়নেও আন্তরিক হয়—এমন প্রত্যাশা এখন সবার।
জনপ্রশাসনের কাঠামোগত জটিলতা, আমলাতন্ত্রের প্রতিরোধ, দলীয় স্বার্থ রক্ষা ইত্যাদি কারণে অনেক সময় সংস্কার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে বাস্তবায়ন পর্যায়ে একটি শক্তিশালী মনিটরিং ও মূল্যায়ন ব্যবস্থাও গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক গবেষকরা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্য জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যেই জনপ্রশাসনসহ একাধিক খাতে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলো থেকে পাওয়া সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এই উদ্যোগের সফলতা নির্ভর করবে কার্যকর বাস্তবায়ন ও নিয়মিত মূল্যায়নের ওপর।
বাংলাবার্তা/এমএইচ