
ছবি: সংগৃহীত
শ্রীলঙ্কার গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার টেস্টের চতুর্থ দিনটি ছিল নাটকীয় উত্থান-পতনে ভরপুর। আর এই উত্থান-পতনের নাটকীয়তায় কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠেছেন তরুণ অফস্পিনার নাঈম হাসান। একাদশে তার অন্তর্ভুক্তি ছিল একপ্রকার হঠাৎ সিদ্ধান্ত—মেহেদী হাসান মিরাজের অসুস্থতায় বদলি হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন তিনি। তবে সেই সুযোগটিকে তিনি কেবল কাজে লাগাননি, বরং রূপান্তরিত করেছেন ম্যাচের গতিপথেই।
শুক্রবার, চতুর্থ দিন শেষ হওয়া পর্যন্ত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে এসেছে বাংলাদেশের হাতে। দ্বিতীয় ইনিংসে সাত উইকেট হাতে রেখে সফরকারীরা এগিয়ে আছে ১৮৭ রানে। দলের এই প্রতিকূলতা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান যিনি রেখেছেন, তিনি নাঈম হাসান।
বাংলাদেশের পক্ষে দেশের বাইরে প্রথমবার বল হাতে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছেন নাঈম। প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কা ব্যাটিংয়ে ভালো অবস্থানে থাকলেও, হঠাৎ করেই নাঈমের বোলিং তোপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তাঁর নিখুঁত লাইন-লেংথ ও ধারাবাহিক চাপ সৃষ্টি করা বোলিংয়ে শেষ চার উইকেট ২০ রানের ব্যবধানে তুলে নেয় বাংলাদেশ। এতে করে সফরকারীরা পায় ১০ রানের এক মূল্যবান লিড—যা একসময় অসম্ভব বলে মনে হচ্ছিল।
চতুর্থ দিনের খেলা শেষে নাঈম হাসান সংবাদমাধ্যমে বলেন, “উইকেট ব্যাটিং সহায়ক ছিল, তাই আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম ধারাবাহিকভাবে একই জায়গায় বল করে ব্যাটারদের চাপে ফেলব। ভালো বল করলে ওরা চাপের মধ্যে পড়ে, তখনই ভুল করে বসে। আমরা সেটারই সুযোগ নিয়েছি।”
দ্বিতীয় ইনিংসে শান্ত ও সাদমানের হাফসেঞ্চুরিতে ভালো ভিত গড়ে তুলেছে বাংলাদেশ। চতুর্থ দিন শেষে সফরকারীরা ১৮৭ রানে এগিয়ে, হাতে সাত উইকেট। শেষ দিনে পিচ আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে লঙ্কানদের সামনে বড় লক্ষ্য দাঁড় করাতে চাইছে বাংলাদেশ। নাঈম বলেন, “শেষদিনের উইকেট সাধারণত খারাপ হয়ে যায়, তাই যতটা সম্ভব চাপ সৃষ্টি করাই হবে আমাদের পরিকল্পনা। বড় লক্ষ্য দিতে পারলে যে কোনো কিছুই সম্ভব।”
২০১৮ সালে টেস্ট অভিষেক হলেও নাঈম এখন পর্যন্ত খেলেছেন মাত্র ১৮টি টেস্ট। দলের নির্ভরযোগ্য অফস্পিনার হিসেবে আগে থেকেই জায়গা ধরে রেখেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। যার কারণে নাঈমকে বেশিরভাগ সময় বসেই কাটাতে হয়েছে। কিন্তু সুযোগ যখন পেয়েছেন, বারবার প্রমাণ করে দিয়েছেন নিজের সামর্থ্য। মিরাজের অনুপস্থিতিতেই নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করেছেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে নাঈম বলেন, “দুর্ভাগা বলে কিছু নেই। একেকজন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার একেক রকম হয়। আমারটা এমনই হয়েছে। তবে আমি যেটা পেয়েছি, তাতেই খুশি। দল এখন খুব ভালো অবস্থানে আছে, শেষদিনে শ্রীলঙ্কা চাপে থাকবে। পঞ্চম দিনে অনেক কিছু হতে পারে।”
এই নিয়ে ক্যারিয়ারে চতুর্থবার পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছেন নাঈম হাসান। অফস্পিনার হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে যা বেশ গর্বজনক একটি পরিসংখ্যান। তার এই পারফরম্যান্সের মাধ্যমে বোঝা গেল, মিরাজ না থাকলেও বাংলাদেশের স্পিন বিভাগ ঠিকই সামলাতে পারে চাপ। শুধু আত্মবিশ্বাস ও সুযোগের প্রয়োজন।
বাংলাদেশ এখন ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে। গলের মতো কঠিন ভেন্যুতে যদি এই তরুণ স্পিনারদের বোলিংয়ে জয় আসে, তবে সেটা হবে শুধু দলেরই নয়—নাঈম হাসানের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এক মাইলফলক।
ম্যাচ এখনো শেষ হয়নি, তবে নাঈম হাসানের এই অভাবনীয় সাফল্য ইতোমধ্যেই তাকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন আলোয় তুলে ধরেছে। তরুণ এই স্পিনারের জন্য হয়তো এটাই হতে পারে এক নতুন শুরু, যেখানে তিনি বারবার বলবেন—"যা হয়েছে, আমি তাতেই খুশি", আর সেই তৃপ্তিই হয়তো তাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে অনেক দূর।
বাংলাবার্তা/এমএইচ