ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে আবারও যুদ্ধের সুর বেজে উঠেছে। ইসরাইলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান, ফলে হঠাৎ করেই উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। শনিবার (২১ জুন) বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টার দিকে এই ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ইরান থেকে ছোড়া একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করা হয়েছে, যার জেরে পুরো ইসরাইলজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
টাইমস অব ইসরাইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান থেকে উৎক্ষেপিত ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করামাত্রই ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে সাইরেন বেজে ওঠে এবং নাগরিকদের দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়। যদিও ঠিক কতটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে এবং তারা কোথায় আঘাত হানতে পারে, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত কিছু জানায়নি আইডিএফ।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী পরে জানায়, সর্বশেষ ইরান মোট ২৫টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে বা আইরন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিহত করা হয়েছে। যদিও মধ্য ও দক্ষিণ ইসরাইলে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি, হাইফা শহরে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্রে ২৩ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে, যাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এই ঘটনার মধ্যেই কূটনৈতিক পর্যায়ে চলছে তীব্র বাকযুদ্ধ। জেনেভায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানান, ইসরাইল যদি ‘নিজেদের আগ্রাসন’ বন্ধ করে, তাহলে তেহরান কূটনৈতিক আলোচনা বিবেচনা করতে পারে। তিনি বলেন, "আমরা সংঘাত চাই না, কিন্তু আত্মরক্ষার অধিকার আমাদের আছে।"
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ইসরাইলকে হামলা কমাতে কোনো চাপ প্রয়োগের পক্ষে তিনি নন। তার ভাষায়, "এ মুহূর্তে তাদের হামলা থামাতে বলাটা খুব কঠিন একটা অনুরোধ হবে।"
ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) চিফ অব স্টাফ ইয়াল জামির দাবি করেছেন, ইরানে হামলার প্রস্তুতি দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল। তিনি বলেন, “বছরের পর বছর আমরা এই পরিকল্পনা করেছি, কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোয় গোপনীয়তা বজায় রেখে প্রস্তুতি আরও জোরদার করা হয়েছে।”
জানা গেছে, শুক্রবার (২০ জুন) থেকেই ইরানের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। এসব হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল ইরানের সামরিক ঘাঁটি এবং অস্ত্রাগার। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি সরাসরি যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি লক্ষণ, যা গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করতে পারে।
ইরান-ইসরাইল উত্তেজনার এই পর্যায়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে তিনি বলেন, “এই সংঘাত শুধু ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটি এমন একটি অগ্নিসংযোগের দিকে যাচ্ছে যা গোটা অঞ্চলকে জ্বালিয়ে দিতে পারে। এই অগ্নি যদি ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।”
ইসরাইলজুড়ে এখনো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। রাজধানী তেল আবিব থেকে শুরু করে হাইফা, আশদোড, বিয়ের শেভা এবং জেরুজালেমে বহু মানুষ পারিবারিক বাঙ্কারে অথবা সরকার নির্ধারিত আশ্রয়কেন্দ্রে রাত কাটাচ্ছেন। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, স্কুল, হাসপাতাল এবং জনসমাগমস্থলগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান এই সংঘাত এখন আর ‘নিযুত মাত্রার পাল্টা হামলায়’ সীমাবদ্ধ নেই। বরং, এটি সরাসরি সামরিক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাদের মধ্যস্থতা ছাড়া এই সংঘাত থামানো কঠিন হবে।
মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানিনির্ভর দেশগুলোর মধ্যে এখন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, কারণ এই সংঘাত যদি প্রসারিত হয়, তা হলে তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা যুদ্ধের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। কূটনৈতিক সমঝোতার সুযোগ ক্রমশ সংকীর্ণ হচ্ছে এবং দুই পক্ষই যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। জাতিসংঘের সতর্কবার্তা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের মধ্যেও সংঘাত যেন আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এই উত্তেজনা কোথায় গিয়ে থামবে, তা কেউ জানে না। তবে বিশ্ব আজ এক নতুন যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



