
ছবি: সংগৃহীত
দেশজুড়ে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আবারও বিরূপ আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের ১০টি জেলায় আজ শনিবার (২১ জুন) দুপুর ১টা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য জারি করা পূর্বাভাস অনুযায়ী—যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালি, নোয়াখালি, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট জেলার ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব অথবা পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এই ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এসব জেলার নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার নৌযান এবং যাত্রী সাধারণকে সাবধান থাকার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিন রাজধানী ঢাকায়ও আকাশ মেঘলা রয়েছে সকাল থেকেই। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দুপুর নাগাদ হালকা বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও বৃষ্টির কারণে সাময়িক স্বস্তি মিলতে পারে, তবে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তেও পারে বলে পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে।
চলতি জুন মাসজুড়েই ঢাকাসহ আশপাশের অঞ্চলে গরম এবং বৃষ্টির মিশ্র আবহাওয়া লক্ষ্য করা গেছে। মাঝে মাঝেই দুপুরের দিকে কালো মেঘ জমে হঠাৎ ঝড় ও বৃষ্টির প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। এর ফলে জনজীবনে একদিকে যেমন দুর্ভোগ বাড়ছে, অন্যদিকে ফসলের মাঠ ও পানি ব্যবস্থাপনায় কিছুটা উপকারও হচ্ছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
শুধু অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরেই নয়, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপরও ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং উপকূলীয় এলাকাজুড়ে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত এবং দমকা হাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এজন্য দেশের চারটি সমুদ্রবন্দর—চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রাকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে।
এই আবহাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েন নৌপথে চলাচলকারী যাত্রী ও জেলেরা। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অনেক অঞ্চলেই এখনো যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম নৌযান। ফলে, বজ্রঝড় ও দমকা হাওয়ার সময় এসব এলাকার নদী পারাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, ঝড়ো আবহাওয়ার সময়ে ছোট ট্রলার বা নৌকাগুলোর চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে ফেরি ও যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে সক্রিয় রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু, যা জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কালে দেশের আবহাওয়ায় বড় প্রভাব ফেলে। সাধারণত এই সময়ে দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে বেশি বৃষ্টি হয় এবং অনেক সময় এ বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত ও ঝড়ো হাওয়াও যুক্ত থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মৌসুমি বায়ুর ধরণেও পরিবর্তন এসেছে। হঠাৎ বৃষ্টিপাত, ঝড়, কিংবা ঘণ্টাব্যাপী প্রবল বাতাস আগের চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। ফলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী প্রতিটি অঞ্চলের স্থানীয় প্রশাসন ও নাগরিকদের সচেতন থাকা এখন সময়ের দাবি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর নাগরিকদেরকে অনুরোধ করেছে—ঝড়ের সময় খোলা জায়গায় অবস্থান না করতে, বৈদ্যুতিক খুঁটি, গাছপালা বা টিনশেড ঘরের পাশে না দাঁড়াতে। বজ্রপাতের সময় মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি, কৃষকদের জন্য বৃষ্টিপাত ও ঝড়ের সময় ফসলের ক্ষতি রোধে আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। অনেক এলাকায় কাঁচা ঘরবাড়ি থাকায় সেখানকার বাসিন্দাদের ঝড়ের সময় মজবুত আশ্রয়ে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আজকের দিনটি দেশের ১০টি জেলার জন্য হতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ। রাজধানী ঢাকাসহ যেসব অঞ্চলে ঝড় ও বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে, সেখানে নৌযান চলাচল, খোলা মাঠে কর্মরত শ্রমিক ও শিক্ষার্থী—সবাইকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এছাড়া সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের মানুষদেরও সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন।
মৌসুমি বায়ুর এই প্রভাব যতদিন চলবে, ততদিন প্রতিদিনই পূর্বাভাসের ওপর নজর রাখা এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে চলাই হতে পারে দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ