
ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সাম্প্রতিক বৈঠকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের সামরিক হামলাকে ‘বিপজ্জনক নজির’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি ফু কং। তিনি সতর্ক করে দেন, এই ধরনের আগ্রাসন আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে এবং পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
ফু কং জাতিসংঘে বলেন, ইসরায়েলের এ হামলা দ্রুত অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করে অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। পারমাণবিক ইস্যুটির সমাধান কেবল কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব। তিনি যোগ করেন, এই ইস্যুতে ‘সংলাপ ও আলোচনা’ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই, অন্যথায় এটি অঞ্চলে সংকটকে আরও তীব্রতর করবে।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলার ব্যাপক নিন্দা জানিয়েছে। সৌদি পারমাণবিক ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণ কমিশন এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের ঘোর লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে। তাদের মতে, বেসামরিক পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলা আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য অগ্রহণযোগ্য এবং এর ফলে গুরুতর মানবিক ও পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে।
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বলেছে, ইসরায়েলের সামরিক হামলায় ইরানের খোন্দাব হেভি ওয়াটার রিসার্চ রিঅ্যাক্টর স্থাপনার মূল ভবনগুলোতে ক্ষতি হয়েছে। তবে তারা নিশ্চিত করেছেন যে, ওই স্থাপনায় এখনও পারমাণবিক উপাদান ইনস্টল হয়নি। তাই এই হামলার কারণে বিকিরণ সংক্রান্ত কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়নি। সংস্থাটি বলেছে, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের জন্য তারা ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখবে।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা বৃদ্ধি করছে। ইসরায়েল এই হামলাগুলোকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অবসান ঘটাতে জরুরি হিসেবে দেখছে, যা তারা তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে। অন্যদিকে, ইরান এসব হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী ও অবৈধ আক্রমণ হিসেবে অভিহিত করেছে।
এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংঘাতের তীব্রতা কমিয়ে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদের বিভিন্ন সদস্য দেশ আশঙ্কা প্রকাশ করছে যে, পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলা কোনো ভুল বোঝাবুঝি বা দুর্ঘটনার মাধ্যমে বড় ধরনের আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে চীন ও সৌদি আরবের মত গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়রা সর্তকবার্তা দিচ্ছে, যেন এ ধরনের হামলা অবিলম্বে বন্ধ করা হয় এবং আলোচনার পথ খোলা থাকে।
ইসরায়েলি হামলা: ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলা, মূলত খোন্দাব রিসার্চ রিঅ্যাক্টরে ক্ষতি।
চীনের বক্তব্য: এটি ‘বিপজ্জনক নজির’, অবিলম্বে অস্ত্রবিরতি দরকার।
সৌদি আরব: আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন, নিন্দা ও উদ্বেগ।
আইএইএ: ক্ষতি হয়েছে, বিকিরণ ঝুঁকি নেই, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: শান্তি ও কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সংকট সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘে চীনের দূত ফু কং-এর কড়া সুরের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, বিশ্বব্যাপী বড় কোনো সংঘাত এড়াতে দ্রুত অস্ত্রবিরতি ও কূটনৈতিক পথ অবলম্বন জরুরি হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই সংকটকে আরও গভীর না করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সক্রিয় ভূমিকা রাখা।
এই সংকটের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে কূটনৈতিক উদ্যোগের সাফল্য ও সংঘাত এড়াতে বিশ্ব নেতাদের নেতৃত্বের ওপর। মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ফিরে আনতে এই সংকটকে গম্ভীরতার সাথে মোকাবিলা করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ