
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘদিনের গুঞ্জন অবশেষে সত্যি হলো। ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান এবার পা রাখতে চলেছেন হলিউডের পর্দায়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের পরিচিত মুখ হিসেবে শাকিব খান এবার যুক্ত হচ্ছেন একটি থ্রিলারধর্মী হলিউড প্রজেক্টে, যার পরিচালনায় রয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নির্মাতা আসিফ আকবর। ঈদের সময় থেকেই শোনা যাচ্ছিল—শাকিব এবার হলিউডে যাচ্ছেন। অবশেষে সেই সম্ভাবনার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এলো পরিচালক নিজেই।
নির্মাতা আসিফ আকবর জানান, তার পরবর্তী আন্তর্জাতিক প্রজেক্টে প্রধান চরিত্রে থাকছেন শাকিব খান। চিত্রনাট্যের প্রাথমিক কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং খুব শিগগিরই শুরু হবে প্রি-প্রোডাকশনের কাজ। ছবিটি নির্মিত হবে একেবারেই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে। থ্রিলারধর্মী এই প্রজেক্টের গল্প ও নির্মাণ কৌশলে থাকবে আমেরিকান স্পাই-অ্যাকশন ঘরানার ছাপ, যেখানে মূল ভূমিকায় দেখা যাবে ঢালিউড সুপারস্টারকে এক নতুন অবতারে।
সিনেমাটিতে শাকিব খানের বিপরীতে থাকবেন দুই অভিনেত্রী—একজন বাংলাদেশের এবং অপরজন হলিউডের জনপ্রিয় মুখ। পরিচালক বলেন, “শাকিব খানকে নিয়ে এমন একটি কনসেপ্ট নিয়ে ভাবছিলাম অনেক দিন ধরেই। আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে উপস্থাপনযোগ্য একজন বাংলাদেশি অভিনেতার দরকার ছিল, এবং শাকিব খান সেই জায়গায় একেবারে উপযুক্ত। তার অভিনয়, উপস্থিতি এবং পর্দায় যে ক্যারিশমা আছে, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই চরিত্রের জন্য।”
এছাড়া সিনেমার খল চরিত্রে একজন নামকরা হলিউড অভিনেতাকে নেওয়ার পরিকল্পনাও চূড়ান্ত পর্যায়ে। তবে এখনই নাম প্রকাশ করা হয়নি। আসিফ আকবর জানান, “আমরা চাই ছবিটা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হোক। যে কারণে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নির্বাচন, লোকেশন, প্রযুক্তি, সব কিছুতেই কোনো আপস করা হচ্ছে না।”
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই মার্কিন পরিচালক ইতোমধ্যেই হলিউডে বেশ কিছু সিনেমা নির্মাণ করে প্রশংসিত হয়েছেন। তার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে: Barnyard, Astro, The Commando এবং Smoke Filled Lungs।
এছাড়া বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ও আলোচিত স্পাই থ্রিলার MR-9: Do or Die—যেখানে বলিউডের মিঠুন চক্রবর্তীসহ আন্তর্জাতিক অনেক তারকা ছিলেন, সেটিও তার পরিচালনায় তৈরি হয়। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে আরেকটি বড় নাম—শাকিব খান।
সিনেমার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে শাকিব খান জুলাই মাসের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে তিনি চূড়ান্ত স্ক্রিপ্ট নিয়ে আলোচনায় বসবেন, পাশাপাশি অংশ নেবেন লুক টেস্ট, ফিটনেস সেশন, স্টান্ট ওয়ার্কশপসহ বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক প্রক্রিয়ায়।
এটি হবে শাকিব খানের প্রথম হলিউড প্রজেক্ট, যদিও এর আগে তিনি কলকাতায় একাধিক যৌথ প্রযোজনার ছবিতে কাজ করেছেন। তবে আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্ম হিসেবে এটি তার ক্যারিয়ারের অন্যতম বড় ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ছবিটির শুটিং শুরু হবে ২০২5 সালের প্রথমার্ধে, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন লোকেশনে। নির্মাতা জানান, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে ছবিটি বিশ্বব্যাপী মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। ইতোমধ্যেই হলিউডের কয়েকটি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে এবং তারা সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহ ও স্ট্রিমিং উভয় মাধ্যমেই মুক্তির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
ঢাকাই সিনেমার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে শাকিব খান বহু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন। এবার সেই অভিজ্ঞতা আর তারকা শক্তিকে তিনি নিয়ে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক পর্দায়। সিনেমাপ্রেমীদের মতে, এ এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ঢালিউডের জন্য এটি যেমন সম্মানের, তেমনি নতুন এক সম্ভাবনার দিকচিহ্নও বটে।
পরিচালক-প্রযোজকেরা আশা করছেন, এই প্রজেক্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের সিনেমা শিল্প নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। শাকিব খান নিজেও বেশ আশাবাদী। ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, তিনি এই প্রজেক্ট নিয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত এবং বলছেন—“বাংলাদেশি একজন অভিনেতা হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের প্রতিভা দেখানোর এটাই সেরা সুযোগ।”
অপেক্ষা এখন ছবির শুটিং শুরু এবং ২০২৬ সালে সেই স্বপ্নময় মুহূর্তের জন্য, যখন একেবারে ভিন্ন এক ভূমিকায়, একেবারে নতুন ভাষায়, বিশ্বজুড়ে পর্দা কাঁপাতে আসবেন শাকিব খান।
বাংলাবার্তা/এমএইচ