বাংলাবার্তা
ভ্রমণ আমাদের জীবনের নিত্যসঙ্গী। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় আমরা ভ্রমণ করি। মোটকথা জীবন চলার পথে আমাদের ভ্রমণ করতেই হবে। শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-কর্ম, আনন্দ-উচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ছুটে যেতে হয় শহর থেকে গ্রামে। দেশ থেকে দেশান্তরে।
এই ভ্রমণ শুধুমাত্র শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-কর্ম ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসের জন্য নয়। বরং ভ্রমণ ইবাদতও হতে পারে অনেক সময়। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এ প্রসেঙ্গ বিভিন্ন আলোচনা এসেছে।
মানুষের জ্ঞান ও জানার পরিসর বিস্তৃত করে ভ্রমণ। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের ভ্রমণ করতে নির্দেশ দিয়ে পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘আপনি বলুন! তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখো, কীভাবে সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ২০)
মানুষের প্রয়োজনে ভ্রমণের ভিন্নতায় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ব্যবহার করতে হয়। এর মধ্যে কিছু কিছু ভ্রমণ বাস্তবিক অর্থেই ঝুঁকিপূর্ণও হয়। তাই তো প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভ্রমণে যানবহানসহ সব ধরনের নিরাপত্তার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় দোয়া শিখিয়েছেন।
ভ্রমণে বের হলে বাহনে চড়ার পর প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দোয়া পড়তেন-
উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। সুবহানাল্লাজি সাখখারালানা হাযা ওয়ামাকুন্না লাহু মুকরিনিন, ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুন কালিবুন।’
অর্থ : আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি অত্যন্ত দয়ালু ও নেহাত করুণাময়। তিনি পূতপবিত্র ওই সত্তা যিনি বাহনকে আমার অধীন করে দিয়েছেন। আমাদের কাছে তাকে আয়ত্তে আনার ক্ষমতা ছিল না। অবশ্যই আমরা আমাদের প্রভুর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।
ভ্রমণে বের হওয়ার আগে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও একটি শিক্ষণীয় দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো-
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা হাউইন আলাইনা সাফারানা হাজা, ওয়াতবি আন্না বুদাহ। আল্লাহুম্মা আনতাস সাহিবু ফিস সাফারি ওয়াল খালিফাতু ফিল আহলি। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মি উয়াসাইস সাফারি ওয়া কাআবাতিল মানজারি, ওয়া সুইল মুনকালাবি ফিল মালি ওয়াল আহাল।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের জন্য আমাদের এ সফর সহজ করে দাও। রাস্তার দূরত্ব কমিয়ে দাও। হে আল্লাহ! আমাদের সফরের সঙ্গী তুমি এবং আমাদের পরিবারের কাছে তুমি আমাদের স্থলাভিষিক্ত। হে আল্লাহ! সফরের কষ্ট-ক্লান্তি ও ভয়ানক দৃশ্য দেখা থেকে এবং পরিবার, সম্পদ-বিত্ত ও অধীনস্থদের কাছে খারাপ অবস্থায় ফেরত আসা থেকে তোমার কাছে রক্ষা চাই। (মুসলিম, হাদিস : ৯৭৮/২)
পানিতে নৌকা বা জাহাজ ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই দোয়া পড়া-
উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি মাজরিহা ওয়া মুরসাহা, ইন্না রাব্বি লা-গাফুরুর রহিম।’
অর্থ : তোমরা এতে আরোহন কর। আল্লাহর নামেই এর গতি ও স্থিতি। আমার পালনকর্তা অতি ক্ষমাপরায়ন, মেহেরবান। (সুরা হুদ, আয়াত : ৪১)
আরও পড়ুন: স্ত্রীর সঙ্গে হাসি-কৌতুক করা সুন্নত
ভ্রমণে কোথাও অবতরণ করলে বা কোথাও অবস্থান করতে হলে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া পড়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘যে এই দোয়াটি পড়বে, সে ঘরে ফেরা পর্যন্ত তাকে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না। দোয়াটি হলো-
উচ্চারণ : ‘আউ-জু বিকালিমাতিল্লা-হিত তাম্মাতি মিন শার-রি মাখালাক।’
অর্থ : আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালেমার মাধ্যমে সব ধরনের অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা চাচ্ছি। (মুসলিম, হাদিস নং : ২৭০৮)
মহান আল্লাহ আমাদের সবার ভ্রমণ নিরাপদ করুন। ভ্রমণে সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত করুন। ভ্রমণের মাধ্যমে সাওয়াব লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাবার্তা/জেডএইচ