
ছবি: সংগৃহীত
ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে আসন পুনর্বিন্যাসের পথে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গাজীপুর জেলায় সর্বোচ্চ ভোটার থাকার কারণে সেখানে একটি সংসদীয় আসন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, অন্যদিকে সর্বনিম্ন ভোটারসংখ্যার জেলা বাগেরহাটে একটি আসন কমানো হচ্ছে। এভাবে দেশের মোট ৩৯টি সংসদীয় আসনে পরিবর্তন আসছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ তথ্য জানান কমিশনার আনোয়ারুল। তিনি বলেন, “ভোটারের ঘনত্ব ও সংখ্যা বিবেচনায় রেখে সীমানা নির্ধারণে কাজ করেছে একটি কারিগরি কমিটি। যেসব জেলায় ভোটারের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি, সেখানে একটি আসন বাড়ানোর এবং যেসব জেলায় ভোটার কম, সেখান থেকে আসন কমানোর প্রস্তাব এসেছে।”
কমিশনার আরও বলেন, “গাজীপুরে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে। সে কারণেই সেখানে একটি আসন বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব এসেছে। বিপরীতে, বাগেরহাট জেলার ভোটার সংখ্যা সবচেয়ে কম। তাই সেখানে একটি আসন কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।”
এবারের সীমানা পুনর্বিন্যাসে মোট ৩৯টি আসনে পরিবর্তন আসছে বলে জানান ইসি আনোয়ারুল। তবে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের আগে এসব পরিবর্তনের বিরুদ্ধে দাবি-আপত্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত নাগরিকরা এ বিষয়ে আপত্তি জানাতে পারবেন।
তিনি বলেন, “সীমানা পুনঃনির্ধারণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কমিশন ১৬ জুলাই একটি ৯ সদস্যের কারিগরি কমিটি গঠন করে। তারা জেলার ভোটার সংখ্যা বিশ্লেষণ করে ‘গ্রেডিং সিস্টেমে’ যাচাই-বাছাই করেন।”
সীমানা পুনঃনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় এমন সব জেলা যেগুলোতে ১, ২ বা ৩টি আসন রয়েছে, সেগুলোতে কোনো বিভাজন ঘটানো হয়নি। অর্থাৎ ছোট জেলা যেখানে আসন সংখ্যা তুলনামূলক কম, সেখানে আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকছে। এই জেলাগুলোর সীমানা বাড়ানো বা কমানোর সুযোগ নেই বলে স্পষ্ট করেন নির্বাচন কমিশনার।
তিনি বলেন, “২৫০ এর কাছাকাছি কিছু জেলায় সীমানা পুনঃনির্ধারণের কোনো আবেদনই আসেনি। ফলে এসব এলাকায় সীমানা অপরিবর্তিত থাকছে।”
এ বিষয়ে আনোয়ারুল ইসলাম আরও জানান, ইসি ইতোমধ্যে সীমানা পুনঃনির্ধারণের গেজেট প্রকাশের অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, “আশা করছি আগামীকাল (৩১ জুলাই) এর মধ্যে নতুন গেজেট প্রকাশিত হবে।”
এই গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নতুন করে আসন সীমানা নির্ধারণের কাজ সম্পন্ন হবে। এরপরই শুরু হবে চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী প্রস্তুতি।
নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আসন সীমানা পুনর্বিন্যাস নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা চলতে পারে। তবে কমিশন বলছে, তারা আইন অনুযায়ী এবং সুনির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে কাজ করছে। অনিয়ম বা পক্ষপাতিত্বের সুযোগ নেই।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সীমানা পুনর্বিন্যাস করেছিল নির্বাচন কমিশন। এবারও প্রায় ৬ বছর পর সেই উদ্যোগ নেওয়া হলো। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা পুনর্গঠন নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে, তবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দাবি-আপত্তির সুযোগ সঠিকভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি।
এদিকে নতুন আসন পুনর্বিন্যাসে সংশ্লিষ্ট সব মহলের মতামত নেওয়া হবে বলেও জানান ইসি আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, “গণশুনানির মাধ্যমেও আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার জনমত জানব। কারণ, জনগণের ভোটাধিকার ও ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করাই আমাদের উদ্দেশ্য।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ