
ছবি: সংগৃহীত
দেশজুড়ে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আজ বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া, বজ্রসহ বৃষ্টি এবং সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় দমকা হাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর উভয়ের জন্যই সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাগরে বায়ুচাপের তারতম্য এবং নিম্নচাপজনিত প্রভাবে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যা দুপুরের মধ্যেই কিছু এলাকায় ঝড়ো আবহাওয়া তৈরি করতে পারে।
আজ ভোর ৫টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সময়কে ঘিরে দেওয়া পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এ সময় স্থানীয়ভাবে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। নদীবন্দরগুলোতে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে ঘাট, ফেরিঘাট, খেয়াঘাট ও নদীপথে চলাচলরত ছোট নৌযানগুলোর জন্য সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি। এসব এলাকায় নৌ চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষও (বিআইডব্লিউটিএ)।
সাগরের দিকে তাকালে আরও বেশি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়ার বিশেষ সতর্কবার্তায় জানানো হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে বর্তমানে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে, যার ফলে সমুদ্রের ওপর দিয়ে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে দেশের চারটি প্রধান সমুদ্রবন্দর—চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা—কে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এটি মাঝারি মাত্রার একটি সতর্কতা, যার মানে হচ্ছে, সমুদ্রবন্দর এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দমকা হাওয়া ও উচ্চ ঢেউ দেখা দিতে পারে। এর ফলে পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রলারগুলোর জেটিতে নোঙরকরণ এবং যাত্রার সময় নির্ধারণে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি এসে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অতীতে দেখা গেছে, এমন সতর্কতা উপেক্ষা করে গভীর সমুদ্রে গেলে প্রাণহানিসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে এখনকার উত্তাল অবস্থা স্থায়ী না হলেও তা মুহূর্তের মধ্যে তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। ফলে মাছ ধরার ট্রলার বা যাত্রীবাহী জাহাজগুলোর প্রতি বিশেষভাবে সাবধানতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এর আগে আরও একটি পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছিল, দেশের তিনটি বিভাগ—চট্টগ্রাম, বরিশাল এবং সিলেটে—আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে পাহাড়ি ঢল ও পাহাড় ধসের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে গত কয়েকদিন ধরেই থেমে থেমে বৃষ্টিপাত চলছে, যার কারণে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। শহরের নিচু এলাকাগুলোয় পানি জমে জনজীবনে বিঘ্ন ঘটছে।
জেলা প্রশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় স্থানীয় প্রশাসনগুলোকে সতর্ক থাকতে বলেছে। উপকূলীয় এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দল প্রস্তুত রাখা, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা এবং স্থানীয়ভাবে বৈদ্যুতিক সংযোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই ধরনের আবহাওয়া পরিস্থিতি আরও ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা স্থায়ী হতে পারে। এরপর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে তা নির্ভর করবে বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তন ও বায়ুচাপের ব্যবধান কমার ওপর।
সার্বিকভাবে বলা যায়, আজকের দিনটি উপকূলীয় অঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো দুর্যোগ এড়াতে স্থানীয় জনগণকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। নদীপথে যাত্রী চলাচল, মাছ ধরা, নৌকা ট্রলার যাত্রা বা উপকূলবর্তী জীবনে আজকের দিনে সতর্কতা অবলম্বন না করলেই নয়। সম্ভাব্য ঝড়, বৃষ্টি এবং উত্তাল সমুদ্র পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে আমাদের সবারই চাই সজাগতা ও প্রস্তুতি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ