
ছবি: সংগৃহীত
সরকারি দপ্তরে কর্মরত প্রায় ৩০০ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যাপক করফাঁকির অভিযোগে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট তল্লাশি শুরু করেছে। এই তালিকায় রয়েছে এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, শিক্ষা প্রকৌশল, গণপূর্ত, পিডিবি, ওয়াসা, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রকৌশলী। অভিযোগ অনুসারে, এসব প্রকৌশলী কোটি কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়ে স্বচ্ছতা ও আইন অমান্য করেছেন।
আয়কর গোয়েন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা অনেক ক্ষেত্রে আত্মীয়-স্বজনের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ গড়ে তোলার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ সঞ্চয় করেছেন। পাশাপাশি, মৎস্য ও পোলট্রি খামার প্রতিষ্ঠার আড়ালে অবৈধ আয় গোপন করে কর ফাঁকি দিয়েছেন।
আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মোহাম্মদ আবদুর রকিব জানান, বেশ কয়েকজন প্রকৌশলীর ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যে জব্দ করা হয়েছে এবং কয়েকজন কর ফাঁকির প্রমাণ পেয়ে কর পরিশোধ করেছেন। তদন্তের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে যেমন ভূমি অফিস, রিহ্যাব, বিআরটিএ, সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং ব্যাংকে তথ্য সংগ্রহের জন্য চিঠিপত্র পাঠানো হয়েছে।
তদন্তাধীন তালিকায় সিলেট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী কেএম ফারুক হোসেন অন্যতম। তার স্ত্রী ও মেয়ে সম্পর্কেও কর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। তাদের নামে প্রায় ৮০টির বেশি মেয়াদি আমানত (এফডিআর) রয়েছে, যা আয়কর নথিতে অন্তর্ভুক্ত নয়। ২৭ এপ্রিল থেকে তাদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ রয়েছে। কেএম ফারুক বলেন, “আয়কর গোয়েন্দারা আমার নথি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, পরে হিসাব চালু করবে।”
এলজিইডির আরেক প্রকৌশলী এসএম কবির ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রায় ২ কোটি টাকার করফাঁকির তথ্য পেয়েছে তদন্তকারী দল। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে, যার কারণে তিনি এক কোটি টাকার বেশি কর পরিশোধ করেছেন। তিনি দাবি করেন, তার ওপর অতিরিক্ত কর চাপানো হয়েছে।
তদন্তাধীন অন্য প্রকৌশলীদের মধ্যে রয়েছেন এলজিইডির ফিরোজ আলম তালুকদার ও বাচ্চু মিয়া; সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মনিরুল ইসলাম; পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ ও মো. মাহবুবুর রহমান; সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান এবং সওজের সিলেট জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ফজলে রাব্বী।
খালেদ মাহমুদ ২০১৬ সালে পিডিবির ৩৪তম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মো. মাহবুবুর রহমান ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে পুনরায় নিয়োগ পেয়েছেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান বর্তমানে জয়দেবপুর-বেদগ্রাম বাইপাস প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আয়কর গোয়েন্দারা জানান, এই প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে সম্পদের অবৈধ ক্রয়-বিক্রয় ও আয়রোধক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এই ধরনের কর্মকাণ্ডের কোনো ছাড় দেয়া হবে না এবং কর ফাঁকিদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে।
এখনো তদন্ত চলমান থাকায় এই প্রকৌশলীদের করফাঁকির ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য ও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে দ্রুত জানা যাবে বলে আয়কর গোয়েন্দারা আশা প্রকাশ করেছেন।
বাংলাবার্তা/এসজে