![ডেঙ্গুর রূপ বদলাচ্ছে, বাড়ছে প্রকোপ ডেঙ্গুর রূপ বদলাচ্ছে, বাড়ছে প্রকোপ](https://www.banglabartabd.com/media/imgAll/2022December/BB---2023-05-20T144933451-2305200849.png)
সংগৃহীত ছবি
ঢাকা: ডেঙ্গুর প্রকোপ বিগত সময়ের চেয়ে এই বছর আরও বাড়তে পারে। তাই এখন থেকে যথাযথ প্রস্তুতি থাকতে হবে। ২০২২ সালের মে মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৫ জন। আর এ বছর একই সময়ে সেই সংখ্যা বেড়েছে ছয় থেকে সাত গুণ।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৯ জন। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১২৭ জন, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ২৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, ডেঙ্গুর রূপ বারবার বদলাচ্ছে। ২০১৯ সালে এযাবৎকালের সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায় বাংলাদেশে। সেই বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। তখন ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছিল মে মাসের শেষে। সেই প্রকোপ কমেছে পরের বছরের জানুয়ারিতে। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে ৫০ হাজারের বেশি রোগী পাওয়া যায় এবং ৯০ জন মৃত্যুবরণ করেন।
পরের বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয় অক্টোবর মাসে। ২০২০ সালে ১ হাজার ৪০৫ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায় এবং মৃত্যুবরণ করেন ৭ জন। করোনার কারণে এই বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কম দেখা দেয়। ২০২১ সালে আবার ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয় জুলাই মাসে। এই বছর ২৮ হাজার ৪২৯ জন রোগী পাওয়া যায় এবং মারা যায় ১০৫ জন।
২০২২ সালে ৬২ হাজার রোগী পাওয়া যায় দেশে, যেখানে রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু হয় ২৮১ জন। মৃত্যু বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলেছেন, দেরী করে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসায় এমনটি হতে পারে।
ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব শহরে বেশি হলেও ২০২২ সালের পরিসংখ্যান বলছে, রোগী বাড়ছে রাজধানী ঢাকার বাইরেও। গেলো বছর মোট ৬২ হাজার ৩৮২ ভর্তি রোগীর মধ্যে ঢাকার বাইরের রোগী ছিল ২৩ হাজার ১৬২ জন। এর বাইরে শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৩৫২ জন।
এবছরও ঢাকা শহরে রোগীর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে, পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষাকাল দীর্ঘায়িত হচ্ছে। যার ফলে ডেঙ্গুর মৌসুম দীর্ঘ হচ্ছে। সাধারণ সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমার কথা থাকলেও গতবছর নভেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়েছে।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, এবার যে ধরন আমরা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে এই বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ গত বছরের তুলনায় বাড়বে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে আছে অপরিকল্পিত নগরায়ন। এছাড়া আছে পানি প্রবাহের সিস্টেম এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। সব মিলিয়ে মৌসুম যেমন ছিল সেটি হয়তো থাকবে না। ডেঙ্গুর পিক সিজন আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাস। কিন্তু গতবছর তার ব্যতিক্রম ছিল, পিক হয়েছিল অক্টোবর মাসে। মার্চে সার্ভে করা হয়েছিল এডিস মশার। তবে এখন সেটা অনেকখানি পরিবর্তন হয়ে গেছে। যার কারণে ডেঙ্গু বেড়েছে।
২০১৯ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে গত বছর বিশ্বব্যাংকের গবেষণা বলছে—সারা দেশে যত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল, তার অর্ধেকই ঢাকার। আর ঢাকায় ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার ছিল সারা দেশের ৭৭ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলেছে, ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় ভারী বর্ষণের সঙ্গে পরের মাসগুলোর অনুকূল তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা ডেঙ্গুর ব্যাপক বিস্তারে ভূমিকা রেখেছিল।
আর আবহাওয়া যেভাবে বদলে যাচ্ছে, তাতে ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোতে বর্ষাকালে ডেঙ্গুর মতো বাহকনির্ভর রোগের প্রকোপ বাড়ছে।
বিশ্বব্যাংকের গবেষণা বলেছে, আর্দ্রতা কমে আসার পাশাপাশি তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের মাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতে রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে।
কবিরুল বাশার বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশন জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করেছে। সেখানে স্কাউট, বিএনসিসি সদস্যদের সম্পৃক্ত করেছে। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের যদি এসব কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা যায়, সাধারণ নাগরিকদের সচেতন করা যায়, কোনভাবেই যেন বাড়ির আঙ্গিনায় এডিস মশার প্রজননস্থল তৈরি না হয়। উন্মুক্ত স্থানে যদি সিটি করপোরেশন কাজ করে এবং ব্যক্তি উদ্যোগে বাসাবাড়িতে কাজ করা হয় তাহলে দুই পক্ষের সম্পৃক্ততায় এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের কাজে গতি আসবে। এতে ডেঙ্গু একটি নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে আসবে।