
ছবি: সংগৃহীত
মৌসুমী ফ্লু, যা ইনফ্লুয়েঞ্জা নামে পরিচিত, হলো একটি ভাইরাসজনিত শ্বাসযন্ত্রের রোগ যা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে শীতকালে ব্যাপক আকারে দেখা যায়। যদিও প্রধানত শীতকালে এর প্রকোপ বেশি, তবে বছরের যেকোনো সময় ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ ঘটতে পারে। বর্তমানে আমাদের দেশে এবং বিশ্বজুড়েও এই রোগের প্রকোপ লক্ষ্যণীয় হারে বাড়ছে, তাই এর বিষয়ে সঠিক ধারণা রাখা এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
মৌসুমী ফ্লু কী?
মৌসুমী ফ্লু মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের এ ও বি প্রজাতি দ্বারা সৃষ্ট হয়। এটি শ্বাসনালী ও ফুসফুসের ওপর প্রভাব ফেলে, যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি বিভিন্ন রকমের উপসর্গ অনুভব করেন। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সংক্রমিত ব্যক্তির মাধ্যমে এটি সহজেই অন্যান্যদেরও সংক্রমিত করতে পারে। সুতরাং এর সংক্রমণ রোধে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য।
লক্ষণ
মৌসুমী ফ্লুর সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে-
-
হঠাৎ বমি জ্বর
-
প্রচন্ড কাশি
-
গলা ব্যথা
-
সর্দি-নাক ঝাড়া
-
শরীরে নানা স্থানে ব্যথা ও অস্বস্তি
-
অবসাদ, ক্লান্তি
-
মাথা দমকা বা মাথাব্যথা
-
শীত অনুভব এবং কখনও কখনও বমি বমি ভাব
এসব উপসর্গ অন্যান্য সাধারণ সর্দি-কাশির মত হলেও, ফ্লু সাধারণত বেশি তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।
ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী
যারা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে-
-
শিশুরা, বিশেষত ৫ বছরের নিচে
-
বয়স্করা, বিশেষত ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিরা
-
যাঁদের শরীরে অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, বা শ্বাসতন্ত্রের রোগ আছে
-
গর্ভবতী মহিলারা
এই গোষ্ঠীর মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হলে গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতা বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই তাদের অবশ্যই বিশেষ যত্ন নেওয়া এবং প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সংক্রমণের প্রক্রিয়া ও প্রতিরোধ
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি, হাঁচি অথবা নাক ঝাড়ার মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও সংক্রমিত কোনো ব্যক্তির স্পর্শ করা জিনিস থেকে ভাইরাস অন্যদের শরীরে যেতে পারে। তাই সংক্রমণ রোধে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি।
সংক্রমণ রোধে করণীয়:
-
সাবান ও পানি দিয়ে নিয়মিত ও কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়া
-
কাশি ও হাঁচির সময় নাক ও মুখ টিস্যু বা কনুই দিয়ে ঢেকে রাখা
-
টিস্যু ব্যবহার করার পর তা সঠিকভাবে ফেলে দেওয়া
-
জনসমাগম এড়ানো ও জনসমক্ষে মাস্ক ব্যবহার করা
-
আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখা
-
শিশুদের হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ও সঠিক স্বাস্থ্যচর্চার শিক্ষাদান
ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা (ফ্লু শট)
মৌসুমী ফ্লু প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা গ্রহণ করা। এই টিকা শরীরে ভাইরাসের দুর্বল স্ট্রেন প্রবেশ করিয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। এতে শরীর রোগ প্রতিরোধক অ্যান্টিবডি তৈরি করে, ফলে রোগ ছড়িয়ে পড়লেও তা কম তীব্র হয় বা বাঁচা যায়।
বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীকে নিয়মিত ফ্লু টিকা দেওয়া উচিত। টিকা নেওয়ার মাধ্যমে তারা শারীরিক দুর্বলতা সত্ত্বেও ইনফ্লুয়েঞ্জার গুরুতর ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে পারেন।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অপরিহার্য। এর মধ্যে রয়েছে-
-
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
-
নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক কার্যকলাপ
-
পর্যাপ্ত পরিমাণে, অর্থাৎ ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো
-
মানসিক চাপ কমানো
-
পর্যাপ্ত পানি পান করা
স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো শরীরকে শক্তিশালী করে এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করে।
বর্তমান পরিস্থিতি ও সতর্কতা
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মৌসুমী ফ্লু ও করোনার উপসর্গ অনেকটাই মিল থাকে, তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা একান্ত জরুরি। যথাযথ মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হাত পরিষ্কার রাখার অভ্যাস এখন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্লু ও করোনা থেকে বাঁচার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই।
সামগ্রিক পরামর্শ
-
ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জার উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
-
নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের নিয়মিত ফ্লু টিকা দিন।
-
অসুস্থ ব্যক্তিদের কাছাকাছি যাওয়া এড়িয়ে চলুন।
-
শিশু ও বয়স্কদের বিশেষ যত্ন নিন।
-
হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন।
মৌসুমী ফ্লু থেকে সুরক্ষিত থাকা এবং সুস্থ থাকার জন্য এসব পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ