
ছবি: সংগৃহীত
নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছিল ১৪৪টি সংগঠন। কিন্তু ইসির প্রাথমিক বাছাইয়ে একটি দলও উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এর ফলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সহ সব আবেদনকারী দলই প্রাথমিক ধাপে বাদ পড়েছে। দলগুলোকে প্রয়োজনীয় ঘাটতি পূরণের জন্য ১৫ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
১৫ জুলাই (মঙ্গলবার) নির্বাচন কমিশন থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়, নিবন্ধনের জন্য প্রাথমিক বাছাইয়ে অংশ নেওয়া ১৪৪টি দলের একটিও ইসির নির্ধারিত মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। ফলে এই দলগুলোকে এখন ঘাটতি পূরণ করে আবার জমা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
নিবন্ধনের এই প্রক্রিয়ায় মূলত রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কাঠামো, গঠনতন্ত্র, কার্যক্রম, জেলা ও উপজেলায় কার্যক্রমের বিস্তার, নির্দিষ্ট সংখ্যক সাধারণ সদস্যের উপস্থিতি, কেন্দ্রীয় কমিটির বৈধতা, অডিট রিপোর্ট, ব্যাংক হিসাব এবং রাজনৈতিক দর্শন সংবলিত কাগজপত্র যাচাই করা হয়। এসব ক্ষেত্রে প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে নানা ঘাটতি পাওয়ায় দলগুলোকে তা সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে ৬২টি দলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে বাকি ৮২টি দলকেও একই ধরনের চিঠি পাঠানো হবে। চিঠিতে বলা হয়েছে, দলগুলোকে তাদের জমা দেওয়া কাগজপত্রে যেসব ঘাটতি রয়েছে, তা নির্ধারিত ১৫ দিনের মধ্যে পূরণ করতে হবে।
একজন ইসি কর্মকর্তা জানান, ‘‘এই দলগুলোর মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছে যাদের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক কাঠামোর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। কোথাও কোথাও মনগড়া তথ্য দিয়ে আবেদন করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংক হিসাব বা আর্থিক প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। আবার অনেক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের সুনির্দিষ্ট তথ্যই ছিল না।’’
এর আগে ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল ইসি একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করে। শুরুতে আবেদন জমার শেষ তারিখ ছিল মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে অনেক দলের অনুরোধে এই সময় ২২ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৪৪টি দল আবেদন করে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, নিবন্ধন পাওয়ার জন্য ২০১৮ সালের সংশোধিত রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা অনুযায়ী তিনটি মূল শর্ত পূরণ করতে হয়: কমপক্ষে ১০০টি উপজেলা বা পৌরসভায় সক্রিয় রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং একটি কার্যকর কমিটি থাকতে হবে; দেশের মোট ভোটারের অন্তত ১ শতাংশের সমর্থনের প্রমাণ দিতে হবে; গত সাধারণ নির্বাচনে দেশের অন্তত একটি আসনে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করে জয়ী হতে হবে অথবা ৩০০ আসনের কমপক্ষে ৫০টিতে প্রার্থী দিতে হবে।
তবে নতুন দলগুলোর বেশিরভাগই এসব শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বলেই জানা গেছে।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের তালিকাভুক্ত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫০টি। সর্বশেষ নিবন্ধন পেয়েছে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)’ ও ‘বাংলাদেশ জনঅধিকার পরিষদ’। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগে নিবন্ধন হারিয়েছিল জামায়াতে ইসলামীর মতো পুরোনো দল, যার কারণ ছিল সংবিধানবিরোধী গঠনতন্ত্র।
এখন যেসব নতুন দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে, তাদের বেশিরভাগই অপেক্ষাকৃত অজানা এবং স্থানীয় পর্যায়ে সীমিত কার্যক্রম রয়েছে বলে মনে করছে ইসি।
নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, চিঠি প্রাপ্তির পর ১৫ দিনের মধ্যে ঘাটতি পূরণ না করলে দলগুলো আর নিবন্ধনের বিবেচনায় আসবে না। অর্থাৎ, এই সময়সীমার মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, প্রমাণাদি ও দলীয় কাঠামো উপস্থাপন করতে না পারলে তাদের নিবন্ধনের আবেদন বাতিল বলে গণ্য হবে।
তবে যেসব দল আন্তরিকভাবে কাজ করছে এবং নির্ধারিত শর্ত পূরণে সক্ষম, তারা চাইলে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইসির সামনে নিজেদের দলীয় সক্ষমতা তুলে ধরতে পারবে।
ইসি সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘‘আমরা এই প্রক্রিয়াকে যথাসম্ভব স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক রাখতে চাই। যারা সত্যিই মাঠপর্যায়ে সক্রিয় এবং রাজনৈতিকভাবে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায়, তারা নিশ্চয়ই নিবন্ধনের যোগ্যতা অর্জন করবে।’’
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন শুধু নির্বাচনে অংশগ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি একটি স্বীকৃতি, যা দলটির সাংগঠনিক শক্তি ও জনপ্রিয়তার প্রমাণ বহন করে। তাই এই নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় ইসির কঠোরতা একদিকে রাজনৈতিক শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার প্রয়াস, অন্যদিকে নতুন দলগুলোর জন্য আত্মসমালোচনার উপলক্ষ।
এখন দেখা যাক, ঘোষিত ১৫ দিনের মধ্যে কয়টি দল ঘাটতি পূরণ করে আবার প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ