
ছবি: সংগৃহীত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মামুনুর রহমান এবং সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) বিপ্লব বড়ুয়াসহ ছয়জন পুলিশ সদস্যকে ঘুষ গ্রহণের গুরুতর অভিযোগে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সোমবার (১৪ জুলাই) ওই কর্মকর্তাদের সরিয়ে হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। অভিযোগের তদন্তে ইতোমধ্যে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ৩ জুলাই সিলেট থেকে ঢাকাগামী একটি কাভার্ডভ্যান সরাইল খাঁটিহাতা মহাসড়কের একটি পয়েন্টে আটক করে টহলরত পুলিশ সদস্যরা। তাদের অভিযোগ ছিল, কাভার্ডভ্যানটি ‘অবৈধ মালামাল’ বহন করছিল। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাভার্ডভ্যানটি বৈধভাবে পণ্য পরিবহন করছিল। পুলিশ সদস্যরা সেই সুযোগে চালকের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৮০ হাজার টাকা আদায় করে।
এই ঘটনাটি গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেকেই পুলিশের এই ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহল বিষয়টি আমলে নেয় এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) খাইরুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, “একটি নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মামুনুর রহমানসহ ছয়জন পুলিশ সদস্যকে থানার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে কুমিল্লা রিজিয়নে সংযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তদন্ত করছেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযোগের সত্যতা ও অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এদিকে সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন এসআই সজীব মিয়া। তিনি জানান, “সোমবার থেকে আমি দায়িত্ব নিয়েছি। একটি অভিযোগের ভিত্তিতে পূর্ববর্তী ওসি ও পাঁচজন সদস্যকে একসঙ্গে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বর্তমানে থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল আছে এবং জনগণকে স্বচ্ছ সেবা দেওয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।”
ঘুষ আদায়ের এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে পুলিশ বিভাগ ইতোমধ্যেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। পুলিশের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, ঘুষ গ্রহণের ঘটনাটি যদি তদন্তে প্রমাণিত হয়, তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা ছাড়াও ফৌজদারি মামলা দায়েরের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশ বিভাগ এখন ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, “হাইওয়ে পুলিশের প্রধান দায়িত্ব নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা, সেখানে দায়িত্ব পালনরত কারো বিরুদ্ধে যদি অনিয়ম বা দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে আমরা কঠোর অবস্থান নেব। এ ধরনের কর্মকাণ্ড পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করে।”
বাংলাদেশের বিভিন্ন মহাসড়কে পুলিশের ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ নতুন নয়। পণ্যবাহী যানবাহন, যাত্রীবাহী বাস কিংবা অন্যান্য পরিবহনের চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়টি একটি ‘ওপেন সিক্রেট’ হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক সংগঠনগুলো এ নিয়ে প্রতিবেদন ও আন্দোলন করলেও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণসহ প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা অনেক সময়ই বিলম্বিত হয়েছে।
তবে এবার সরাসরি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সরকার তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, যা সচেতন নাগরিকদের মাঝে আশার সঞ্চার করেছে।
পুলিশের যে দায়িত্ব জনগণের জানমাল রক্ষা করা, সেই দায়িত্ব পালনের বদলে ঘুষ গ্রহণ ও হয়রানির অভিযোগ তাদের প্রতি জনগণের আস্থা হ্রাস করে। খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ঘটনায় ওসি ও অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে যে ধরনের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে যদি তদন্তে যথাযথ প্রমাণ অনুসারে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হয়। একইসঙ্গে সড়কে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের আরও জবাবদিহির আওতায় আনতে প্রশাসনিক সংস্কার জরুরি হয়ে উঠেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ