
ছবি: সংগৃহীত
জীবন রক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জাম করোনারি স্টেন্টের—যা সাধারণভাবে ‘হার্টের রিং’ নামে পরিচিত—মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই দেশের বাজারে ৩১টি কোম্পানির সরবরাহ করা এসব স্টেন্টের দাম সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর (ডিজিডিএ)। এই পদক্ষেপের ফলে হৃদরোগীদের চিকিৎসা ব্যয় কমে আসবে এবং অনেকের জন্য জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা আরও সহজলভ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুরে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অধিদফতরের পরিচালক ড. মো. আকতার হোসেন জানান, ইতোমধ্যে তিনটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ১০ ধরনের স্টেন্টের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন মূল্য ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে। এই নতুন দামে রোগীরা পূর্বের তুলনায় ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত কম খরচে স্টেন্ট প্রতিস্থাপন করাতে পারবেন।
ড. আকতার হোসেন বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে মূল্য সমন্বয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বাকি ২৮টি কোম্পানির করোনারি স্টেন্টের দাম কমানো হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো, জীবনরক্ষাকারী এই চিকিৎসা সরঞ্জামের ক্ষেত্রে একটি যুক্তিসঙ্গত ও টেকসই মূল্যনীতি প্রতিষ্ঠা করা।”
এর আগে ৩ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, স্টেন্টের দাম সর্বোচ্চ ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। নতুন দামের তালিকা অনুযায়ী, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানভেদে খুচরা মূল্য সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্টেন্ট আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সংবাদমাধ্যমকে জানান, দাম কমানোর এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হলেও ভবিষ্যতে যেন অযৌক্তিকভাবে মূল্য বাড়ানো বা কমানো না হয়, তার জন্য একটি স্থায়ী মূল্যনীতি প্রণয়ন করা জরুরি। তারা মনে করেন, নির্ধারিত মূল্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হলে রোগীরা সঠিক দামে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারবেন এবং মধ্যস্বত্বভোগী বা অসাধু বাণিজ্যিক প্রভাব কমে আসবে।
বাংলাদেশে হৃদরোগের চিকিৎসায় করোনারি স্টেন্ট ব্যবহার করে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি প্রক্রিয়া এখন ব্যাপকভাবে প্রচলিত। এই পদ্ধতিতে হৃদযন্ত্রের রক্তনালিতে জমে থাকা চর্বি বা অন্যান্য বাধা দূর করে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক করা হয়। ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসব স্টেন্ট আমদানি করা হয়।
দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর অবস্থা ও সামর্থ্য অনুযায়ী চিকিৎসকরা নির্ধারিত মূল্য তালিকা থেকে স্টেন্টের ধরন নির্বাচন করে প্রতিস্থাপন করেন। এ কারণে স্টেন্টের দাম কমে গেলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত রোগীরাও সহজে চিকিৎসা নিতে পারবেন।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্টেন্টের দাম কমানোর এই পদক্ষেপ হৃদরোগজনিত মৃত্যুহার কমাতে সহায়ক হবে। কারণ দেশে হৃদরোগের প্রাদুর্ভাব দ্রুত বাড়ছে এবং অনেক রোগী কেবল উচ্চমূল্যের কারণে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিতে পারেন না।
ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা শুধু দাম কমানো নয়, পণ্যের গুণগত মানও কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। বাজারে যাতে নকল বা নিম্নমানের স্টেন্ট প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য প্রতিটি চালান আমদানির পর ল্যাব টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।”
এখন চোখ থাকবে—আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাকি ২৮ কোম্পানির দাম সমন্বয়ের পর রোগীরা কতটা বাস্তব সুবিধা পান এবং হাসপাতালগুলো কতটা স্বচ্ছভাবে নতুন দাম কার্যকর করে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ