
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনাকে আরও বিস্তৃত পরিসরে তুলে ধরতে মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলোর প্রতি সরাসরি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবসা ও বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে বহুমুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং এর ফলে বাংলাদেশে নতুন ধরনের বাণিজ্যিক সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়িক ফোরামে প্রধান উপদেষ্টা বলেন— “অতীতে বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ অনেক ক্ষেত্রেই প্রত্যাশিত গতিতে এগোয়নি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। নতুন বাংলাদেশে উদ্ভাবন, সংস্কার ও সুযোগের নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত হচ্ছে। আমরা সম্ভাব্য সব উপায়ে দেশকে ব্যবসা-বান্ধব করে তুলতে চাই, কারণ এই পরিবর্তনের ভেতরে আমি সীমাহীন সম্ভাবনা দেখছি।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠী দেশের জন্য এক বিশাল সম্পদ। বিদেশে কর্মরত তরুণ বাংলাদেশিরা বিনিয়োগ ও উদ্যোক্তা কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার ভাষায়— “বিদেশে থাকা তরুণ বাংলাদেশিদের মধ্যে সবসময় দেশের জন্য কিছু করার আকাঙ্ক্ষা থাকে। এই সৃজনশীল শক্তি ও উদ্যোক্তা মনোভাবকে বিনিয়োগকারীদের কাজে লাগানো উচিত।”
ফোরামের শুরুতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন একটি উপস্থাপনা দেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা, অবকাঠামো উন্নয়ন, এবং শুল্ক ও অ-শুল্ক বাধা দূরীকরণের জন্য সরকারের চলমান প্রচেষ্টা তুলে ধরেন।
তার বক্তব্যে উঠে আসে— অর্থনৈতিক অঞ্চলের সম্প্রসারণ, বন্দর ও পরিবহন অবকাঠামোর উন্নয়ন, ডিজিটাল সেবা ও দ্রুত ব্যবসায়িক নিবন্ধন প্রক্রিয়া, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য কর সুবিধা ও নীতি সহায়তা।
আজিয়াটা গ্রুপের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এবং সেলুলার অপারেটর রবির প্রধান শেয়ারহোল্ডার বিবেক সুদ, বাংলাদেশে ২৮ বছরের প্রবৃদ্ধি ও অংশীদারিত্বের সফল অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, টেলিকম খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে আজিয়াটা বাংলাদেশের বাজারে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে এবং ভবিষ্যতেও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
ফোরামে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার বৃহৎ কর্পোরেট ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য— পেট্রোলিয়াম ন্যাশনাল বেরহাদ (Petronas)-এর সভাপতি ও গ্রুপ সিইও টেংকু মুহাম্মদ তৌফিক, ভেরিন ওয়েলথ ফান্ড খাজানা ন্যাশনাল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল ফয়সাল ওয়ান জহির, সিমে ডার্বি প্ল্যান্টেশনস, কুয়ালালামপুর কেপং বেরহাদ (KLK), ইওআই কর্পোরেশন ও ফেলডা গ্লোবাল ভেঞ্চারস-এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, প্রোটন হোল্ডিংস বেরহাদ-এর চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়সাল আলবার, বিশ্বের বৃহত্তম গ্লাভ প্রস্তুতকারক টপ গ্লোভ কর্পোরেশন-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান লিম উই চাই।
এদিন পুত্রজায়ায় মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (NCCIM) এবং বাংলাদেশের ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বারস অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (FBCCI)-এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়। এর মাধ্যমে উভয় দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা আরও জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন— “বাংলাদেশে আসুন, বিনিয়োগ করুন। এখানে সম্ভাবনা অসীম। শিল্প, প্রযুক্তি, কৃষি, জ্বালানি এবং অবকাঠামো—সব খাতেই নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে।”
ফোরামের শেষাংশে উভয় দেশের ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারকরা যৌথভাবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং উভয় দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ