
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে নতুন উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। পণ্য ও সেবা মিলিয়ে ২০২৫–২৬ অর্থবছরে মোট ৬ হাজার ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার (৬৩.৫০ বিলিয়ন ডলার) আয়ের পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে পণ্য রপ্তানি থেকে আসবে ৫৫ বিলিয়ন ডলার এবং সেবা খাত থেকে ৮.৫০ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার, অর্থাৎ নতুন লক্ষ্য আগের বছরের তুলনায় ১৬.৫ শতাংশ বেশি।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, এ বছর রপ্তানি লক্ষ্য নির্ধারণের আগে বিভিন্ন খাতের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিটি খাতের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ বিবেচনা করে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে, যাতে বাস্তবায়নযোগ্যতার পাশাপাশি প্রবৃদ্ধির সুযোগও থাকে।
তৈরি পোশাক (RMG) খাতের প্রধান দুই উপখাত থেকেই আসবে বড় অংশের আয়। ওভেন পোশাক থেকে ২০.৭৯ বিলিয়ন ডলার এবং নিট পোশাক থেকে ২৩.৭০ বিলিয়ন ডলার আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ছাড়া— চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য: ১.২৫ বিলিয়ন ডলার, পাট ও পাটজাত পণ্য: ৯০০ মিলিয়ন ডলার, কৃষিপণ্য: ১.২১ বিলিয়ন ডলার।
এই খাতগুলোর পাশাপাশি অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানিতেও জোর দেওয়া হবে, যেমন জাহাজ, আইসিটি পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, সিরামিকস এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং সামগ্রী।
সেবা খাতের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮.৫০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাস্তবে এই আয় মন্ত্রণালয়ের প্রাক্কলনের চেয়ে আরও বেশি হতে পারে। সেবা খাতের বড় অংশ আসবে আইটি সেবা, পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও পর্যটন থেকে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, আগামী সপ্তাহ থেকে প্রতিটি রপ্তানি খাতের প্রধানদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক হবে। সেখানে প্রতিটি খাতের এক বা দুটি বড় প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। উদাহরণস্বরূপ, তৈরি পোশাক খাতের ক্ষেত্রে শ্রম দক্ষতা বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক দাম বজায় রাখা, কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং আইটি খাতে বিদেশি বাজারে ব্র্যান্ডিং ও অবকাঠামো উন্নয়ন গুরুত্ব পাবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “আমরা লক্ষ্যটি তুলনামূলকভাবে রক্ষণশীলভাবে নিয়েছি। বাস্তবে রপ্তানি আয় লক্ষ্য ছাড়িয়ে যেতে পারে, যদি বৈশ্বিক অর্থনীতি অনুকূলে থাকে।” তিনি আরও জানান, সরকার নতুন বাজার সম্প্রসারণ এবং অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির কৌশল হাতে নিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার সম্ভাবনাময় বাজারগুলোতে প্রবেশের জন্য বাণিজ্যিক কূটনীতি জোরদার করা হবে।
২০২৫–২৬ অর্থবছরের এই লক্ষ্য অর্জন হলে বাংলাদেশ শুধু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে পারবে না, বরং কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও শিল্পায়নেও গতি পাবে। তবে বৈশ্বিক মন্দা, কাঁচামালের দাম, এবং লজিস্টিক খরচ বৃদ্ধি—এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাও হবে বড় পরীক্ষা।
সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগ সফল হলে এই লক্ষ্য বাংলাদেশের রপ্তানি ইতিহাসে নতুন মাইলফলক হয়ে দাঁড়াবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ