
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি থেকে দুটি বড় বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ ক্রয়ের সিদ্ধান্ত দিয়েছে। দেশীয় নৌ পরিবহন খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আরও অবাধ ও দক্ষ পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে কেনা এই দুই জাহাজের মোট ক্রয়মূল্য ধরা হয়েছে ৯৩৫ কোটি ৭১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।
ক্রয় করা হবে ৫৫-৬৬ হাজার ডিডব্লিউটি (ডেডওয়েট টন) ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ। বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজগুলো মূলত বৃহৎ পরিমাণে খনিজ, ধান্য, কয়লা ও অন্যান্য বাল্ক পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এই প্রকল্পের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।
জাহাজ ক্রয়ের জন্য এক ধাপ দুই খাম দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। মোট তিনটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়, যার মধ্যে দুটি দরপত্র কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হিসেবে বিবেচিত হয়। সব বিচার-বিশ্লেষণের পর, টেকনিক্যাল ইভালুয়েশন কমিটির (টিইসি) সুপারিশ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি কোম্পানির দর সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক বলে নির্বাচিত হয়। দরপত্র অনুযায়ী মোট ক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ৭৬ দশমিক ৬৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯৩৫ কোটি টাকা।
ক্রয়কৃত জাহাজ দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে ক্রয় করা হবে। এই জাহাজগুলো মূলত বহুল পরিমাণ পণ্য ও কাঁচামাল বহনের কাজে ব্যবহৃত হবে, যা বাংলাদেশের সামগ্রিক বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
একই বৈঠকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন উন্নয়ন প্রকল্প ‘বাংলাদেশ আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন প্রকল্প-১’ (চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ ও সংযুক্ত নৌপথ খনন) এর অবশিষ্ট কাজ বাস্তবায়নের জন্য সরকারি ক্রয় পদ্ধতির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বরগুলো হলো বিআর ডব্লিউটিপি-ডব্লিউ২-০১, বিআর ডব্লিউটিপি-ডব্লিউ৩-০১ এবং বিআর ডব্লিউটিপি-ডব্লিউ১-০২।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নৌপরিবহন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের বৃহত্তর পরিসরে বন্দরসমূহ ও নদীবন্দরগুলোর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহজতর করার পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ লজিস্টিক ব্যবস্থাও গতিশীল করা সম্ভব হয়। নতুন দুটি জাহাজ কেনার মাধ্যমে বাংলাদেশের বাল্ক পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে পরিবহন খরচ কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সভাপতিত্বে এই ধরনের নৌযান কেনা এবং অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন প্রকল্পের উন্নয়ন সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের উদ্যোগের অংশ। এই প্রকল্পগুলো দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বহুমাত্রিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ