
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে কর প্রশাসন আরও কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। আয়কর রিটার্ন সময়মতো জমা না দিলে শুধু জরিমানাই নয়, বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেওয়া, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পরিষেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা—এসব ব্যবস্থাও নিতে পারবেন কর কর্মকর্তারা। ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তুত করা আয়কর নির্দেশিকায় এই বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর ফলে কর ফাঁকি বা রিটার্ন জমা না দেওয়ার প্রবণতা কমিয়ে আনা এবং করদাতাদের শৃঙ্খলার আওতায় আনা সরকার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্য।
নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করলে করদাতারা পাঁচ ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন—
জরিমানা: আয়কর আইনের ২৬৬ ধারায় নির্ধারিত অর্থদণ্ড।
কর অব্যাহতির ক্ষেত্র সংকোচন: আয়কর আইনের ১৭৪ ধারা অনুযায়ী করমুক্তির সুযোগ কমে যাবে।
অতিরিক্ত কর: মাসিক ২ শতাংশ হারে বিলম্ব মাশুল।
পরিষেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন: কর কর্মকর্তারা চাইলে করদাতার বাসাবাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানিসহ অন্যান্য পরিষেবা কেটে দিতে পারবেন।
বেতন-ভাতা প্রাপ্তিতে জটিলতা: কর্মচারী বা কর্মকর্তার বেতন-ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে জটিলতা বা বিলম্ব তৈরি হতে পারে।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা মূলত দুই ধরনের কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীর (টিআইএন) জন্য প্রযোজ্য— যাদের বার্ষিক করযোগ্য আয় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি। যাদের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক, এমনকি আয় করযোগ্য সীমার নিচে থাকলেও। বর্তমানে ৩৯ ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবা নিতে হলে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হয়। এর মধ্যে ব্যাংক ঋণ, গাড়ি নিবন্ধন, ভূমি হস্তান্তর, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
এনবিআরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অনলাইন ই–রিটার্ন সিস্টেমে প্রযুক্তিগত সমস্যা থাকলে এবং করদাতা সঠিকভাবে নিবন্ধন করতে না পারলে তিনি আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের কাছে আবেদন করতে পারবেন। যৌক্তিক কারণ প্রমাণিত হলে অতিরিক্ত বা যুগ্ম কর কমিশনারের অনুমোদনক্রমে কাগুজে রিটার্ন দাখিলের সুযোগ মিলবে।
গত বছর সীমিত আকারে ব্যক্তিগত করদাতাদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়। তাতে ১৭ লাখের বেশি ব্যক্তি করদাতা ই–রিটার্ন দাখিল করেন। এখন করদাতারা ঘরে বসেই ব্যাংক ট্রান্সফার, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ, রকেট, নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করে কর পরিশোধ করতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গেই অনলাইনে রসিদ প্রিন্ট ও আয়কর সনদ সংগ্রহের সুবিধা পাওয়া যায়।
কর কর্মকর্তাদের মতে, এই পদক্ষেপ শুধু রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য নয়, বরং কর সংস্কৃতি গড়ে তোলা এবং শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য নেওয়া হয়েছে। অনেক সময় করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও কিছু ব্যক্তি রিটার্ন দাখিল করেন না, ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। কঠোর ব্যবস্থা কার্যকর হলে এ ধরনের কর ফাঁকি ও অবহেলা অনেকটাই কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই নির্দেশিকা কার্যকর হলে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বেতন-ভাতা প্রাপ্তিতে জটিলতা সৃষ্টি কর ফাঁকিবাজদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শাস্তি হয়ে দাঁড়াবে, যা ভবিষ্যতে করদাতাদের মধ্যে আরও সতর্কতা ও দায়বদ্ধতা আনবে।
বাংলাবার্তা/এসজে