
ছবি: সংগৃহীত
আজ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রাজধানী ঢাকায় আগমন করছে একটি উচ্চপর্যায়ের ইউরোপীয় প্রতিনিধি দল, যারা তিনদিনের সফরে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো দক্ষিণ এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করা এবং দুই অঞ্চলের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা।
এই প্রতিনিধিদলটি জার্মানভিত্তিক ‘ফ্রিডরিখ নওম্যান ফাউন্ডেশন ফর ফ্রিডম’ (এফএনএফ)-এর দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক কার্যালয় আয়োজন করেছে। দলের মধ্যে জার্মান পার্লামেন্টের সদস্য সান্দ্রা ওয়েজার ও মার্কুস ফাবার, লিবারেল ইন্টারন্যাশনালের ডয়চে গ্রুপের সভাপতি জুর্গেন মার্টেন্সসহ জার্মানির রাজনীতি, অর্থনীতি ও সুশীল সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রয়েছেন।
এফএনএফ দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক কার্স্টেন ক্লেইন জানান, “এই সফরের মাধ্যমে জার্মানি এবং ইউরোপের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুত বর্ধমান অঞ্চলের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে আমরা কাজ করব। পাশাপাশি পারস্পরিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে।”
বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতি এবং আঞ্চলিক রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বঙ্গোপসাগরের নিরাপত্তা, বন্দরনগরীর ভূমিকাসহ বিমসটেকের মতো আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর স্বাগতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। এজন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, দক্ষ শ্রমিক অভিবাসন ও শিল্প উন্নয়ন নিয়ে এই সফরে ব্যাপক আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
সফরের সময় প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। এর মধ্যে আছেন দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল, নেটজ বাংলাদেশ, গ্যেটে ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ, বিমসটেক সচিবালয়ের কর্মকর্তারা এবং বাংলাদেশ-জার্মান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিজিসিসিআই) প্রতিনিধিরা।
এছাড়া প্রতিনিধিদল সাভারের একটি তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করবে, যেখানে তারা শ্রম অধিকার, শিল্প সরবরাহ চেইন ও দক্ষ শ্রমিকদের অভিবাসন বিষয়ক চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বাস্তবিক অভিজ্ঞতা গ্রহণ করবে। এর পাশাপাশি তারা আঞ্চলিক নিরাপত্তা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নীতি সংস্কার নিয়ে স্থানীয় অর্থনৈতিক ও গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করবে।
বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি দ্রুত উন্নতির ধাপে পৌঁছেছে, যেখানে ইউরোপের উন্নত প্রযুক্তি, জ্ঞান ও নীতি নির্দেশনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। এই শিক্ষা সফর মূলত উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য গুরুত্ব বহন করে।
এফএনএফ নিয়মিত এ ধরনের সফরের আয়োজন করে থাকে যাতে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের নেতারা একসঙ্গে এসে অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সমন্বয় সাধন করতে পারেন। বাংলাদেশের এই সফর দক্ষিণ এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যকার সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।
বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান ও দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তাকে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকায় পৌঁছে দিয়েছে। বঙ্গোপসাগরের নিরাপত্তা, পরিবেশগত সংকট মোকাবিলা, শ্রমশক্তির বৈশ্বিক চাহিদা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি করা অপরিহার্য।
এই সফর দুটি অঞ্চলের মধ্যে কেবল রাজনৈতিক সম্পর্কই নয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করার দিকনির্দেশনা তৈরি করবে। সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বাজার ও শ্রমশক্তির চাহিদা ইউরোপীয় বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরার সুযোগ হবে।
তিন দিনের এই সফর বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ হিসেবে ধরা হচ্ছে যেখানে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হবে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পথ সুগম হবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্ক আরও গভীর ও বহুমুখী করতে এফএনএফ-এর আয়োজনকৃত এই প্রতিনিধি দলের আগমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ