
ছবি: সংগৃহীত
দেশজুড়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৩ জন। একই সময়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪২৮ জন ডেঙ্গু রোগী। এই তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে বুধবার (৬ আগস্ট) সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়ের হিসাব অনুযায়ী এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯২ জনে, যার মধ্যে ৫৩ জন পুরুষ এবং ৩৯ জন নারী। এদিকে, বছরজুড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ২২ হাজার ৮১২ জন।
বিভাগের ভিত্তিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৪২৮ জনের মধ্যে কোন বিভাগে কতজন ভর্তি হয়েছেন, তার একটি বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো:
-
বরিশাল (সিটি করপোরেশন ছাড়া): ১০৪ জন
-
ঢাকা মহানগর: ১১৩ জন
-
ঢাকা বিভাগ (বাকি অংশ): ৭৪ জন
-
চট্টগ্রাম বিভাগ: ৩৯ জন
-
রাজশাহী বিভাগ: ৫০ জন
-
খুলনা বিভাগ: ৩০ জন
-
রংপুর বিভাগ: ৪ জন
-
ময়মনসিংহ বিভাগ: ১৪ জন
এই সংখ্যাগুলো থেকে পরিষ্কার যে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকাগুলো এখনও সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পাশাপাশি বরিশাল ও রাজশাহী অঞ্চলেও ডেঙ্গু সংক্রমণের হার বাড়ছে, যা বিশেষভাবে উদ্বেগের বিষয়।
জুলাই মাসেই হাসপাতালে ১০ হাজার ছাড়িয়েছে রোগী
চলতি বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে জুলাই মাসে, যেখানে এক মাসেই ১০ হাজারেরও বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এটি ইঙ্গিত করে যে বর্ষাকাল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ভয়াবহ গতিতে বেড়েছে।
ডেঙ্গু মৌসুমি রোগ হলেও এ বছর পরিস্থিতি আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বর্ষার পানি, জলাবদ্ধতা এবং অকার্যকর মশকনিধন কার্যক্রমকে ডেঙ্গু বিস্তার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
মৃতের সংখ্যা ও লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৯২ জনের মধ্যে পুরুষ ৫৩ জন এবং নারী ৩৯ জন। এর মানে, নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে মৃত্যুহার কিছুটা বেশি, যা জীবনধারা ও বাহ্যিক কাজকর্মে সময় কাটানোর কারণে হতে পারে বলে মত চিকিৎসকদের।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়
এই ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতিতে জনসচেতনতা ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগের গুরুত্ব বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকার বিভাগ এডিস মশার বিস্তার রোধে যেসব নির্দেশনা দিয়েছে, তা দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাগরিকদের যা যা করতে বলা হয়েছে:
-
বাড়ির ভেতরে ও বাইরে জমে থাকা পানি দ্রুত অপসারণ করা
-
ফুলদানি, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিক কন্টেইনার ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার রাখা
-
দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করা
-
জ্বর হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ও রক্ত পরীক্ষা করানো
-
নিজ এলাকায় মশার বিস্তার রোধে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সচেতনতা তৈরি
চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে শুরুতেই উপযুক্ত চিকিৎসা নেওয়া খুব জরুরি। অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, যা মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
বিশেষ করে যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা কিডনি সমস্যা রয়েছে—তাদের জন্য ডেঙ্গু আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগ এখন আর কেবল ঢাকার সমস্যা নয়; এটি সারা দেশের জন্য এক ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ছে এবং মৃত্যু বাড়ছে—এটা সামগ্রিকভাবে এক সংকটপূর্ণ চিত্র।
এই মুহূর্তে প্রয়োজন প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ, নাগরিক সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। তা না হলে, আগামীর দিনগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ