
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও কূটনৈতিক এলাকাগুলোতে নতুন করে সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধন ও গণজমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় এলাকা এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন যমুনা ও তার আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলগুলো।
ডিএমপি সদর দপ্তরের জারি করা একটি গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৮ আগস্ট শুক্রবার থেকে এই নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। গণবিজ্ঞপ্তিতে সই করেছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
গণবিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, “জনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে” এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডিএমপি অধ্যাদেশ, ১৯৭৬-এর ২৯ ধারা অনুযায়ী পুলিশের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত এলাকার মধ্যে রয়েছে:
-
বাংলাদেশ সচিবালয় ও এর সংলগ্ন এলাকা
-
প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন 'যমুনা'
-
পার্শ্ববর্তী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিং ও মোড়গুলো, যেমন:
-
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং
-
কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং
-
অফিসার্স ক্লাব ক্রসিং
-
মিন্টো রোড ক্রসিং
-
এই এলাকার ভেতরে ও চারপাশে কোনো ধরনের রাজনৈতিক, সামাজিক বা পেশাজীবী সংগঠনের সভা, মিছিল, মানববন্ধন, শোভাযাত্রা, অবস্থান ধর্মঘট কিংবা গণজমায়েত আয়োজন করা যাবে না।
ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, অঘোষিত কর্মসূচি, বিভিন্ন দলের শক্তি প্রদর্শন ও অপ্রত্যাশিত ভিড়ের আশঙ্কায় এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিশেষ করে সচিবালয় ও যমুনা এলাকায় নিরাপত্তা এখন সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে একটি অস্থায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যেটি একটি ঐক্যমতের নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। তাঁর সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’ এখন বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংলাপের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এই এলাকা ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা একান্ত জরুরি বলে মনে করছে প্রশাসন।
সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক রাজনৈতিক দল হঠাৎ কর্মসূচি ঘোষণা করে প্রশাসনিক এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি, মিছিল বা প্রতীকী প্রতিবাদ করেছে। এতে সাধারণ মানুষ এবং সরকারি কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বৈঠকের সময়ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিশেষ করে ২৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান দিবস এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে বেশ কয়েকবার যমুনা ভবনের চারপাশে নজিরবিহীন জনসমাগম লক্ষ্য করা গেছে। এ কারণে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন দপ্তর, গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে সুপারিশ করেছে এই নিষেধাজ্ঞা জারির।
ডিএমপি ১৯৭৬ সালের অধ্যাদেশের ২৯ ধারায় বলা হয়েছে—“পুলিশ কমিশনার যদি জননিরাপত্তা, শান্তি বা শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে মনে করেন যে কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন, তাহলে তিনি তা নিষিদ্ধ করতে পারবেন।” এই ধারার আলোকে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এখনো পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত কিছুটা সময়ের জন্য শান্ত পরিস্থিতি বজায় রাখতে কার্যকর হলেও দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক মুক্তচিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধতা তৈরি করতে পারে।
এদিকে নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকারকর্মীদের একাংশ মনে করছেন, প্রশাসনিক ও কূটনৈতিক এলাকায় জনসমাবেশে সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, তবে তা যেন পুরোপুরি 'নিষেধ' পর্যায়ে না যায়, সে বিষয়েও সংবেদনশীল থাকা দরকার।
ডিএমপি জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করা হবে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বা শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। তবে কেউ এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ