
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হলো আজ। এই উপলক্ষে যুক্তরাজ্য (ইউকে) গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে তারা স্পষ্টভাবে জানায়, ২০২৪ সালের গণ-আন্দোলনে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের প্রতি তারা গভীর শ্রদ্ধা জানায় এবং যেসব মানুষ আহত বা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) ব্রিটিশ হাইকমিশনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি বিবৃতি পোস্ট করা হয়। সেখানে লেখা হয়:
“আজ বাংলাদেশে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হলো। এ উপলক্ষে আমরা সেইসব মানুষকে স্মরণ করছি, যারা নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। আহতদের কথাও গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।”
বিবৃতির শেষাংশে যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জনগণ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে বলা হয়, “গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যেতে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের জনগণ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে রয়েছে।”
এই বক্তব্য কেবল আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধা জানানোই নয়, বরং বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রতি যুক্তরাজ্যের কূটনৈতিক অবস্থানকেও তুলে ধরে। বিশেষ করে যখন দেশটি ‘অন্তর্বর্তী সরকার’ শব্দটি ব্যবহার করে, তখন এটি একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক রূপান্তর প্রক্রিয়াকে স্বীকৃতি দিচ্ছে এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণকে সমর্থন জানাচ্ছে।
২০২৪ সালের এই দিনেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও তরুণ নাগরিক রাজপথে নেমে এসেছিল একটি গণতান্ত্রিক ও অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থার দাবি নিয়ে। বিদ্যমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার বিরুদ্ধে ওই অভ্যুত্থান জনমতকে এক সুতোয় গেঁথে দিয়েছিল। আন্দোলনের সময়কার সহিংসতায় বেশ কিছু প্রাণহানি ঘটে এবং শত শত মানুষ আহত হন।
এই আন্দোলন থেকেই গড়ে উঠেছিল অন্তর্বর্তী প্রশাসনের ধারণা, যা পরে দেশের শাসনব্যবস্থায় কার্যকর রূপ পায়। আজ সেই আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে যুক্তরাজ্যের এই বিবৃতি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
যুক্তরাজ্য বিগত কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশের কৌশলগত ও উন্নয়ন সহযোগী। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রসারে উভয় দেশের মধ্যে বহু চুক্তি ও যৌথ কর্মসূচি রয়েছে। ব্রিটিশ হাইকমিশনের আজকের বিবৃতিতে শুধুমাত্র অতীত স্মরণের বিষয় নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি সুস্পষ্ট বার্তা রয়েছে—বাংলাদেশের জনগণ যদি গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পথে অগ্রসর হতে চায়, তাহলে যুক্তরাজ্য সবসময় তাদের পাশে থাকবে।
এই বিবৃতিকে অনেকেই পশ্চিমা কূটনীতির গুরুত্বপূর্ণ এক ধাপ হিসেবে দেখছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাজ্য বরাবরের মতোই মানবাধিকারের পক্ষে এবং রাজনৈতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে। সেই নীতি অনুসারেই তারা এক বছর আগে ঘটে যাওয়া অভ্যুত্থানকে ‘গণতান্ত্রিক রূপান্তরের’ একটি ধাপ হিসেবে দেখে সমর্থন দিচ্ছে।
বাংলাদেশে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আবারো এই ভূখণ্ডে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। যুক্তরাজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি রাষ্ট্রের এই শুভেচ্ছা ও সমর্থন বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে। একই সঙ্গে এটি আন্দোলনে শহিদ হওয়া এবং নিপীড়নের শিকার মানুষের প্রতি এক ধরনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং মানবিক শ্রদ্ধা হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।
গণতন্ত্রের পথে চলতে থাকা বাংলাদেশের জন্য এটি এক প্রকার উৎসাহ ও কূটনৈতিক বন্ধুত্বের প্রকাশ, যা আগামীতেও পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে বলে আশা করা যায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ