
ছবি: সংগৃহীত
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় সাতজনের প্রাণহানি ঘটেছে। বুধবার (৬ আগস্ট) ভোররাতে ঢাকা থেকে নোয়াখালীগামী একটি হাইস মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের খালে পড়ে গেলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
দুর্ঘটনাটি ঘটে বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়াপুর ইউনিয়নের পূর্ব জগদীশপুর এলাকায়, ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে। দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসটিতে ওমান থেকে ফেরা এক প্রবাসী তার পরিবার নিয়ে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে নিজ বাড়ি নোয়াখালীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যেই মর্মান্তিক পরিণতির শিকার হয় তারা।
ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা এবং ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেন। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা মো. তালহা বিন জসিম জানান, সকাল ৬টা ৫ মিনিটে চৌমুহনী ফায়ার স্টেশনের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং উদ্ধার অভিযান শুরু করে।
তিনি বলেন, মাইক্রোবাসটি পূর্ব চন্দ্রগঞ্জ বাজার এলাকা অতিক্রম করার সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। তখনই গাড়িটি রাস্তার পাশের একটি খালে পড়ে যায়। কিছু যাত্রী নিজের চেষ্টায় গাড়ির ভেতর থেকে বের হয়ে আসতে পারলেও বাকিরা আটকে পড়েন এবং ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।
চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেন ভূঁইয়া নিশ্চিত করেছেন, মৃতদের মধ্যে অন্তত দুইজন নারী ও একজন শিশু রয়েছে। তিনি আরও বলেন, “এটি অত্যন্ত মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, চালক হয়তো ঘুমের ঘোরে ছিলেন বা গাড়ির ব্রেকে কোনো সমস্যা হয়েছিল। তবে বিস্তারিত তদন্ত সাপেক্ষে নিশ্চিত হওয়া যাবে।”
তিনি জানান, গাড়িটি খাল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং হতাহতদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। নিহতদের মরদেহ বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে ঘটনাস্থলে ভিড় জমে যায় স্থানীয়দের। অনেকে জানায়, ওই এলাকায় রাস্তার পাশে রেলিং বা নিরাপত্তা দেয়াল না থাকায় প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তারা দ্রুত এ রকম দুর্ঘটনা রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
উল্লেখ্য, দেশে সাম্প্রতিক সময়ে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার দুর্ঘটনার হার বেড়েছে। বিশেষ করে দীর্ঘপথে রাতভর গাড়ি চালানোয় চালকের ঘুম ঘোরে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
সড়ক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সড়কে দুর্ঘটনার বড় কারণগুলোর মধ্যে চালকের ক্লান্তি, অতিরিক্ত গতি, অনিয়ন্ত্রিত ওভারটেকিং এবং যানবাহনের ত্রুটি অন্যতম। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এ ঘটনায় প্রবাসীর স্বজনদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকেই হাসপাতাল ও থানায় ছুটে গেছেন প্রিয়জনদের খবর জানতে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নিহতদের দাফনসহ সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ