
ছবি: সংগৃহীত
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে হঠাৎ করেই তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রসহ অন্তত ২৬টি নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়তে শুরু করে। এতে করে দুই জেলার নদীপাড়ের চরাঞ্চল ও নিম্নভূমি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে সম্ভাব্য বন্যার আশঙ্কা। তবে আশার কথা, রবিবার রাতে বিপৎসীমা অতিক্রম করা তিস্তার পানি সোমবার সকালে কিছুটা কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
রবিবার রাত ১২টা পর্যন্ত লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে পানি ছিল বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে। রাত ১২টার পর পানি কমতে শুরু করে এবং সোমবার সকাল ৬টার দিকে তা ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার (৫২.১৫ মিটার) ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। বর্তমানে দুই জেলায় সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
তবে পানি কমলেও মানুষের দুশ্চিন্তা কমছে না। কারণ, নদীর পানি হঠাৎ করে বাড়ার প্রভাবে তিস্তাপাড়ের বিভিন্ন অঞ্চলে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে নদীভাঙন। বাড়িঘর, ফসলি জমি ও সড়ক-স্থাপনা এখন সরাসরি ঝুঁকির মুখে।
কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী এলাকার কৃষক শমসের আলী (৬০) বলেন, “পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এলাকায় তিস্তা নদীর পাড়ে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক বসতভিটা, আবাদি জমি ও রাস্তাঘাট হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা কোনো সরকারি সহায়তা ছাড়াই নিজেরা বালুভর্তি বস্তা ফেলে নদীর ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছি।”
অন্যদিকে আদিতমারী উপজেলার গোবর্ধন গ্রামের কৃষক সহিদার রহমান জানান, নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় মানুষজনের চলাফেরা ব্যাহত হচ্ছে। “সোমবার সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করলেও নদীপাড়ে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। বসতবাড়ি ও ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে।”
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, “উজান থেকে আসা প্রচুর পরিমাণে বালু ও পলি জমে তিস্তার নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে অল্প পানি বাড়লেও তা সহজেই নদী উপচে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। বর্তমানে নদীতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলেও ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। আমরা পরিস্থিতি নজরদারিতে রেখেছি এবং প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসানও একই আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “নদ-নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে থাকলেও লোকালয়ে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। বিশেষ করে নদীপাড়ের মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।”
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, “বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে নদীপাড়ের ভাঙন ও জলাবদ্ধতা আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। প্রয়োজন হলে আমরা জরুরি সহায়তা, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য প্রস্তুত আছি।”
তিস্তার পানি কমলেও নদীভাঙন এখন বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে তিস্তাপাড়ের মানুষের জন্য। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে এ ধরনের হঠাৎ পানি বাড়া-কমা ও নদীভাঙনের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। তাই এখনই জরুরি স্থায়ী নদী রক্ষা বাঁধ, তীব্র ভাঙনপ্রবণ এলাকায় জরুরি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, এবং স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে দুর্যোগ মোকাবিলার টেকসই কৌশল গ্রহণ। তা না হলে প্রতি বছর এভাবে হাজারো মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, জমি ও জীবিকা হারিয়ে পড়বেন নতুন করে বিপদের মুখে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ