
ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম শহরের অভিজাত চট্টগ্রাম ক্লাবের একটি আবাসিক কক্ষ থেকে সাবেক সেনাপ্রধান ও মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-অর-রশীদকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার (৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার পর ক্লাব কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে তার কক্ষের তালা খুলে তার নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।
জানা গেছে, রোববার রাতে তিনি ক্লাবের অতিথিশালার একটি নির্ধারিত কক্ষে অবস্থান করছিলেন। নিয়মিত অতিথি হিসেবে চট্টগ্রাম ক্লাব ব্যবহারের সুযোগ থাকায় সেখানেই তিনি একাকী অবস্থান করছিলেন। সোমবার সকাল থেকে তাকে ক্লাব চত্বরে কিংবা কক্ষের বাইরে কোথাও দেখা না যাওয়ায় কর্তৃপক্ষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়। দীর্ঘ সময় সাড়া না মেলায় ক্লাবের কর্মীরা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান এবং এরপর পুলিশকে অবহিত করা হয়।
চট্টগ্রাম ক্লাবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আশরাফ উদ্দিন জানান, “সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশীদ ক্লাবের গেস্টহাউসের একটি কক্ষে একা অবস্থান করছিলেন। সাধারণত সকালের দিকে তিনি বের হন বা খাবার খান, কিন্তু এদিন অনেক বেলা পেরিয়ে গেলেও কোনো সাড়া না পেয়ে আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। দুপুর ১২টার পর কোতোয়ালি থানা পুলিশের উপস্থিতিতে কক্ষের দরজার তালা খুলে তাকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে চিকিৎসক এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
সাবেক সেনাপ্রধানের মৃত্যুতে ক্লাবজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। চট্টগ্রাম ক্লাবের সদস্য ও কর্তৃপক্ষ সবাই এই সংবাদে হতবাক ও মর্মাহত হন। খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মহল থেকে শোকপ্রকাশ শুরু হয়।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম গণমাধ্যমকে জানান, “চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)-এর একটি চিকিৎসক দল ক্লাবে এসে সাবেক সেনাপ্রধানকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তারা তাকে মৃত ঘোষণা করেন এবং প্রাথমিকভাবে এটি স্বাভাবিক মৃত্যু, বিশেষ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা দিয়েছেন। তবে ময়নাতদন্ত বা চিকিৎসকদের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত কিছু বলতে পারছি না।”
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, মরহুমের পরিবারকে মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে এবং আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় তার মরদেহ হাসপাতাল ও পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতার জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে।
সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদ ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সম্মানিত কর্মকর্তা। তার মৃত্যুতে দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী, রাষ্ট্র ও জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। তিনি একসময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন এবং বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছেন।
তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সেনাবাহিনী প্রধানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং সামরিক মহল থেকে গভীর শোক ও সমবেদনা জানানো হয়েছে।
সাবেক এই সেনাপ্রধানের মৃত্যু স্বাভাবিক নাকি এর পেছনে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ক্লাব কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও পূর্ণ সহযোগিতা করার কথা জানানো হয়েছে।
মরহুমের শেষকৃত্য কোথায় এবং কখন হবে, সে বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে পারিবারিক সিদ্ধান্ত ও সেনাবাহিনীর প্রটোকল অনুযায়ী যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার দাফন সম্পন্ন করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে চট্টগ্রাম ক্লাবের নিরাপত্তা ফুটেজ, রুম সার্ভিস রেকর্ড এবং অতিথি নিবন্ধন বইসহ নানা বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে যাতে কোনো অনিয়ম বা অস্বাভাবিকতা চিহ্নিত করা যায়।
মৃত্যুকালে হারুন-অর-রশীদ কত বছর বয়সে ছিলেন, সেটি স্পষ্ট করে জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে তিনি সত্তরের ঘরে ছিলেন। তার দীর্ঘ কর্মজীবন ও অবদান বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এবং জাতির ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ