
ছবি: সংগৃহীত
আগামীকাল অর্থাৎ ৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সামনে উপস্থাপন করবেন জাতির দীর্ঘ প্রত্যাশিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও নির্বাচন সংক্রান্ত রোডম্যাপ। মানিক মিয়া এভিনিউয়ের দক্ষিণ প্লাজা থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হবে, যেখানে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা এক মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন। এই সময় প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণও দেবেন, যা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে একটি নতুন আশা ও প্রত্যাশার সূচনা করবে।
সরকারি ও রাজনৈতিক সূত্রের খবর অনুযায়ী, লন্ডনে অনুষ্ঠিত আলোচনার ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই দেশের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করবে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন। অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল প্রকাশ হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া আগামী নির্বাচনের কার্যক্রমের বিস্তারিত রোডম্যাপও আজ উন্মোচন করা হবে, যা নির্বাচনের পরিবেশ ও সময়সূচি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেবে।
৫ আগস্টের অনুষ্ঠানে বিশাল সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তাই অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৃহস্পতিবার রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধানসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের সমাগমের সম্ভাবনা নিয়ে নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত অংশগ্রহণকারীদের জন্য সরকার বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও রংপুরসহ চারটি বিভাগের সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিশেষ ট্রেন চালানো হবে। এসব ট্রেনে যেকোনো ব্যক্তি বিনামূল্যে যাতায়াত করতে পারবেন। তদুপরি, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর ও জয়দেবপুরে চলাচলরত কমিউটার ট্রেনগুলিকেও ফ্রি ঘোষণা করা হয়েছে। ট্রেনের নিরাপত্তা ও যাত্রী সুরক্ষায় রেলওয়ে পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের নিরাপত্তায় ৭০০-এর বেশি এপিবিএন সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রস্তুতি নিয়ে কিছু রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির মধ্যে। তবে প্রধান উপদেষ্টার মধ্যস্থতায় তারা চূড়ান্ত একমত হয়। এবার প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে সকল রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষরে ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত হবে। ঐকমত্য কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপের আলোচনায় নির্ধারিত বিষয়গুলি ইতোমধ্যে দলগুলোকে পাঠানো হয়েছে এবং দ্বিতীয় ধাপের বিষয়গুলোর খসড়া শিগগিরই পাঠানো হবে।
প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহমদ বলেছেন, "৫ আগস্টের এই দিনটি দেশের মানুষের মধ্যে নির্বাচনের ব্যাপারে প্রত্যাশা ও আশার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।" রেলওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি সরদার তমিজ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, চারটি বিভাগের বিশেষ ট্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ট্রেনের সময়সূচি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে।
প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজেও এক বছর পর ‘ছত্রিশ জুলাই’ ফিরে আসার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দিনটি উপলক্ষে মানিক মিয়া এভিনিউ ও আশপাশে দিনব্যাপী নানা আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দেশবাসীকে পরিবার-পরিজন নিয়ে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে এই ঐতিহাসিক দিনটিকে উদযাপন করার জন্য। ‘আমাদের ইতিহাস, আমাদের গৌরব’—এই স্লোগানে জনতার মধ্যে ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রথম ধাপের আলোচনার সিদ্ধান্তসমূহ দলগুলোর কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের আলোচনাগুলোও দ্রুত সম্পন্ন হবে। এর ফলে আগামী নির্বাচনের পরিবেশ ও রাজনৈতিক কাঠামো সম্পর্কে স্পষ্ট রূপরেখা পাওয়া যাবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের’ খসড়া চূড়ান্ত করেছে এবং আগামী মঙ্গলবার গণঅভ্যুত্থানের সকল পক্ষের উপস্থিতিতে সেটি জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।
দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও নির্বাচন রোডম্যাপ আগামীকাল সামনে আসছে। এর মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি নতুন সূচনা হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে জনসমাগম ও রাজনৈতিক ঐক্য—সব মিলিয়ে ৫ আগস্টের দিনটি দেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ