
ছবি: সংগৃহীত
এশিয়া কাপের আগে একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক সিরিজ আয়োজনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রায় নিশ্চিত নেদারল্যান্ডস, আর ভেন্যু হিসেবে জোরালোভাবে আলোচনায় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু ঘোষণা দেওয়া হয়নি, তবে বিসিবির অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বলছে, পুরো সিরিজটি সিলেটেই আয়োজনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত পর্যায়ে।
রোববার (৩ আগস্ট) বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের চেয়ারম্যান ও বোর্ড পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এই পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেন। তার ভাষায়, “চেষ্টা করছি সবগুলো ম্যাচ সিলেটে আয়োজন করার। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সেখানেই ক্যাম্প করতে চাই, এবং খেলা শুরু করতে চাই।”
এই সিরিজ ঘিরে যে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে, তার প্রথম ধাপ হিসেবে আগামী ৬ আগস্ট ঢাকায় শুরু হবে বাংলাদেশ দলের ফিটনেস ক্যাম্প। এই ক্যাম্পে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের শারীরিক সক্ষমতা যাচাই করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে দলের বিদেশি কোচিং স্টাফরাও বাংলাদেশে এসে যোগ দেবেন। বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, ১১ আগস্ট থেকে প্রধান কোচসহ অন্যান্য সাপোর্ট স্টাফরা বাংলাদেশে এসে ক্যাম্পে অংশ নেবেন। ক্যাম্পের স্কিল ও ম্যাচ অনুশীলনের অংশটি এরপর সিলেটে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ফাহিম।
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই সেরা প্রস্তুতি নিতে। এই মুহূর্তে দেশের মধ্যে যেটুকু উইকেট সুবিধা আছে, তাতে সিলেটই সবচেয়ে ভালো বিকল্প। মিরপুরে রান তুলনামূলক কম হয়। কিন্তু সিলেটে উইকেট স্পোর্টিং, সেখানে রান হয়। টি-টোয়েন্টি প্রস্তুতির জন্য এমন উইকেটই দরকার।”
উল্লেখ্য, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রানপ্রসবা উইকেটের গুরুত্ব অপরিসীম। গত কিছুদিন ধরে মিরপুরের ধীর গতির ও টার্নিং উইকেট নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজে উইকেট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল বিস্তর। ব্যাটাররা ছিলেন চাপে, বোলাররা কখনো সুবিধা পেয়েছেন, কখনো পাননি—ফলে সামগ্রিক ব্যাট-বল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঘাটতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
এই প্রেক্ষাপটে এশিয়া কাপের আগে একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক সিরিজে ভালো উইকেটে খেলে আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে চায় বাংলাদেশ দল। এবং সেই উপযুক্ত ভেন্যু হিসেবে বিবেচনায় রয়েছে সিলেট। সেখানে উইকেট সাধারণত ব্যাটিং সহায়ক, একই সঙ্গে ব্যাট-বলের ভারসাম্য থাকে।
নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, “আমরা তো এখানে দুবাইয়ের মতো উইকেট বানাতে পারবো না। কিন্তু আমাদের যেটা আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে উপযুক্ত সিলেটের উইকেট। তাই সিলেটেই সিরিজ আয়োজনের সম্ভাবনা বেশি।”
তবে ভেন্যু এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত না হলেও, পুরো পরিকল্পনা এখন সেদিকেই এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। “আমি নিশ্চিত করে কিছু বলছি না। তবে আমাদের পরিকল্পনা সিলেটেই। খেলাগুলো যেন আদর্শ পরিবেশে হয়, সেটা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
বিসিবির পরিকল্পনায় নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এই সিরিজই হবে এশিয়া কাপের আগে বাংলাদেশের শেষ আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ। এই সিরিজে নিজেদের দল গুছিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মূল স্কোয়াডের খেলোয়াড়দের ফর্ম যাচাই এবং বিকল্পদের চূড়ান্তভাবে দেখে নেওয়ার সুযোগ পাবে টিম ম্যানেজমেন্ট।
প্রস্তুতি ম্যাচ হোক কিংবা আন্তর্জাতিক ম্যাচ—বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপের মতো বড় টুর্নামেন্টের আগে প্রতিটি ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ। সিলেটের স্পোর্টিং উইকেটে ব্যাটারদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া, বোলারদের কার্যকারিতা যাচাই এবং দলীয় পরিকল্পনা প্রয়োগ করার এক মহড়া হিসেবেই দেখা হচ্ছে এই সিরিজকে।
সব মিলিয়ে, এখন শুধু বাকি রয়েছে সিরিজের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও সূচি প্রকাশ। তবে বিসিবির অভ্যন্তরে যেভাবে কথাবার্তা এগোচ্ছে, তাতে সিলেটেই যে নেদারল্যান্ডস সিরিজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেটি অনেকটাই নিশ্চিত।
এশিয়া কাপের সব ম্যাচ বাংলাদেশ খেলবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবু ধাবিতে। তাই উপমহাদেশীয় উইকেটের সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্য রেখে প্রস্তুতি গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে সিলেটকে ঘিরেই বিসিবির পূর্ণ মনোযোগ এখন।
ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এটি এক নতুন প্রত্যাশার দিগন্ত খুলে দিচ্ছে—যেখানে সিলেটের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর শহরে আরেকটি আন্তর্জাতিক সিরিজ উপভোগের সুযোগ আসতে চলেছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ