
ছবি: সংগৃহীত
আগামী সেপ্টেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া কাপ ঘিরে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। মূল জাতীয় দলের পারফরম্যান্স ও স্কোয়াড নির্বাচন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিসিবি এবার বাংলাদেশ ‘এ’ দলের ওপর বিশেষ নজর দিচ্ছে। চলতি মাসেই অস্ট্রেলিয়ায় একটি প্রতিযোগিতামূলক টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে ‘এ’ দল, যেটি নির্বাচকদের জন্য হয়ে উঠতে পারে গুরুত্বপূর্ণ একটি মঞ্চ।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীন ফাহিম জানিয়েছেন, হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) ক্যাম্প ও ‘এ’ দলের কার্যক্রম এখন খুবই গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাঁর মতে, এই দলের কিছু খেলোয়াড় জাতীয় দলে ঢোকার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। শুধু তাই নয়, এদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ আসন্ন এশিয়া কাপে অংশ নিতে পারেন বলেও ইঙ্গিত দেন ফাহিম।
তিনি বলেন, ‘আমরা ভবিষ্যতের জন্য খেলোয়াড় তৈরি করতে চাই। হাই পারফরম্যান্স প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত যেসব তরুণরা এই মুহূর্তে “এ” দলে আছেন, তাদের খেলায় চোখ রাখছি। এখানে কয়েকজন খেলোয়াড় এমন আছে, যাদের নিয়ে নির্বাচকেরা আলোচনা করছেন। যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তাঁদেরই, তবে আমি মনে করি এক বা দুইজন খেলোয়াড় এশিয়া কাপের মূল স্কোয়াডে জায়গা পেতে পারেন।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো জাতীয় দলে একটি গভীরতা তৈরি করা, যেখানে বিকল্প খেলোয়াড়দের প্রস্তুত রাখা হবে। এমন কয়েকজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার ইতোমধ্যেই নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন, যাঁরা আগামী দিনে জাতীয় দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন। এর ফলে দলের প্রতিযোগিতা যেমন বাড়বে, তেমনি গুণগত মানও বৃদ্ধি পাবে।’
বাংলাদেশ ‘এ’ দলের সামনে রয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সিরিজ। আগামী ১৪ আগস্ট থেকে অস্ট্রেলিয়ার নর্দার্ন টেরিটরিতে শুরু হচ্ছে চার দলের টপ এন্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এই টুর্নামেন্টে অংশ নেবে অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগের একটি দল, নেপাল জাতীয় দল, পাকিস্তান ‘এ’ দল এবং স্বাগতিকদের পক্ষ থেকে আমন্ত্রিত আরও একটি দল। এতে অংশ নিতে যাওয়া বাংলাদেশ ‘এ’ দলের পারফরম্যান্স শুধু এই সিরিজের জন্য নয়, বরং সামনের এশিয়া কাপ ও ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক সফরের দল নির্বাচনেও বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
এদিকে এশিয়া কাপে বাংলাদেশ খেলবে গ্রুপ ‘বি’-তে। গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ তিনটি দল হলো হংকং, শ্রীলংকা এবং আফগানিস্তান। তিনটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রত্যেক ম্যাচে হার-জিত নির্ধারণ করবে সুপার ফোরে যাওয়ার ভাগ্য।
গ্রুপ পর্বে ১১ সেপ্টেম্বর হংকংয়ের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর শ্রীলংকার মুখোমুখি হবে দলটি। সবশেষ ১৬ সেপ্টেম্বর গ্রুপের সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
নাজমুল আবেদীন ফাহিম মনে করেন, এশিয়া কাপে সফল হতে হলে কেবলমাত্র সিনিয়রদের পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। তরুণদের প্রতিভা ও ফর্মকেও যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। তাই এই মুহূর্তে “এ” দল ও হাই পারফরম্যান্স ক্যাম্পের খেলোয়াড়দের ম্যাচ ও অনুশীলন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন নির্বাচকেরা, যাতে প্রয়োজনে দ্রুত কাউকে জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে পুরনোদের অভিজ্ঞতা আর নতুনদের তাজা রক্ত মিলিয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ দল গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে। এশিয়া কাপে যে দল নামবে, তা শুধু এই টুর্নামেন্ট নয়, বরং আগামী ২০২6 বিশ্বকাপের প্রস্তুতিরও একটি অংশ। সে কারণেই বিসিবি এখন থেকেই ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা সাজাতে শুরু করেছে। আর সে পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ‘এ’ দল এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ