
ছবি: সংগৃহীত
প্রবাসী বাংলাদেশিরা চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে পাঠিয়েছেন দুই দশমিক ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স, যা গত অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত সাকারাত্মক একটি সূচক হিসেবে ধরা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) জানান, সরকার নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিদের (এনআরবি) দেশে অর্থ পাঠানো আরও সহজতর করতে আইনি চ্যানেলগুলোকে উন্নত ও সহজলভ্য করে তুলেছে। ফলে প্রবাসীরা বৈধ পথে অর্থ প্রেরণ করতে উৎসাহিত হয়েছেন, যার ফলেই রেমিট্যান্স প্রবাহে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে।
অর্থবাজারের ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি বড় কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সরকারি ও অনানুষ্ঠানিক বিনিময় হারের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনা। এর ফলে বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা বৈধভাবে টাকা পাঠাতে বেশি আগ্রহী হয়েছেন।
এছাড়া, অর্থ পাচার দমন এবং বৈদেশিক মুদ্রার অবৈধ লেনদেন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়াও এই প্রবাহ বৃদ্ধির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে পরিবর্তনের পর থেকে বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধ নতুন রূপে জেগে উঠেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এর প্রভাবে প্রবাসীরা দেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় অবদান রাখতে আগ্রহী হয়েছেন এবং বৈধ পথে অর্থ প্রেরণে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
গত অর্থবছরের জুলাইয়ে দেশে পাঠানো রেমিট্যান্স ছিল মাত্র ১.৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছর সেই পরিমাণ বেড়ে প্রায় ২.৪৮ বিলিয়নে পৌঁছেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ইতিবাচক সংকেত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
রেমিট্যান্স দেশের মুদ্রানীতি ও বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে গেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বৃদ্ধি পায়, যা আমদানি চালানো, বিনিয়োগ এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। একই সঙ্গে দেশের বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত হয় ও জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন সম্ভব হয়।
বিশেষজ্ঞরা আশাবাদ ব্যক্ত করছেন, সরকারের সহায়ক নীতি ও প্রবাসীদের দেশপ্রেম বজায় থাকলে আগামীতে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিও সুষ্ঠুভাবে চলমান থাকবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্থায়ন দেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। জুলাই মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহের ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে যে, সরকার ও প্রবাসীদের যৌথ প্রচেষ্টায় দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি আসছে। এটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের পথ সুগম করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ