
ছবি: সংগৃহীত
দেশের করদাতাদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের পদ্ধতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতদিন পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে করদাতাদের কাছে দুটি পদ্ধতি চালু ছিল—একটি ছিল কর কার্যালয়ে সরাসরি গিয়ে কাগজে-কলমে রিটার্ন জমা দেওয়া এবং অন্যটি ছিল অনলাইনে দাখিলের সুযোগ। তবে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার একমাত্র মাধ্যম হবে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।
রোববার (৩ আগস্ট) এনবিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামীকাল সোমবার (৪ আগস্ট) থেকে ২০২৫–২৬ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিল কার্যক্রম শুরু হচ্ছে এবং এবার থেকে দেশের সব করদাতার জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের অংশ হিসেবে কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে করে রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া যেমন আরও সহজ হবে, তেমনি তা হবে সময় ও খরচ সাশ্রয়ী।”
তবে এই বাধ্যবাধকতার মধ্যেও কিছু ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে। এনবিআর জানিয়েছে, ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী করদাতা, শারীরিকভাবে অক্ষম বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন করদাতা, প্রবাসী করদাতা এবং মৃত করদাতার পক্ষে আইনগত প্রতিনিধি ইচ্ছা করলে অনলাইনের পরিবর্তে আগের মতো কাগজে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এ ছাড়া, বিশেষ যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনার বরাবর আবেদন করে অতিরিক্ত বা যুগ্ম কর কমিশনারের অনুমোদনসাপেক্ষে অনলাইন ছাড়া রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ থাকছে।
এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ই-রিটার্ন পোর্টাল (www.etaxnbr.gov.bd) এর মাধ্যমে করদাতারা ঘরে বসেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। শুধু রিটার্ন জমা নয়, কর পরিশোধও এখন করা যাবে বিভিন্ন ডিজিটাল পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহার করে। যেমন:
-
ব্যাংক ট্রান্সফার
-
ডেবিট কার্ড
-
ক্রেডিট কার্ড
-
বিকাশ
-
রকেট
-
নগদ
-
অন্যান্য মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)
যারা নতুন করদাতা বা ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধিত নন, তারা সহজেই নিবন্ধন করে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবেন। এনবিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অনলাইনে রিটার্ন দাখিলে যেকোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক সহায়তা পেতে কল সেন্টার ও অন্যান্য ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যম সক্রিয় থাকবে।
এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে গত বছরের সফলতা। ২০২৪-২৫ করবর্ষে কিছু নির্দিষ্ট করদাতা গোষ্ঠীর জন্য পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইন রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। এতে ব্যাপক সাড়া মেলে এবং ১৭ লাখেরও বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেন। সেই সফল অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই এবার দেশের সব করদাতার জন্য এই বাধ্যবাধকতা চালু করা হয়েছে।
কর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একদিকে কর ফাঁকি রোধ করা সহজ হবে, অন্যদিকে করদাতারা ভোগান্তি ছাড়াই ঘরে বসে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
তবে কিছু করদাতার পক্ষ থেকে উদ্বেগও রয়েছে। বিশেষ করে যারা ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষ নন, কিংবা যারা দূরবর্তী বা প্রযুক্তিগতভাবে সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় বাস করেন, তাদের জন্য অনলাইন রিটার্ন দাখিল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এ বিষয়ে এনবিআর জানিয়েছে, জেলা ও উপজেলায় কর অফিসগুলোতে করদাতাদের জন্য ডিজিটাল সহায়তা ডেস্ক গঠন করা হবে, যেখানে সরকারি কর্মীরা রিটার্ন দাখিলে সাহায্য করবেন। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও ই-রিটার্ন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও ক্যাম্প পরিচালনায় সম্পৃক্ত করা হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী, ২০২৫-২৬ করবর্ষে অনলাইন রিটার্ন দাখিলের মাধ্যমে তারা এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছে। করদাতাদের অংশগ্রহণ বাড়লে রাজস্ব আদায়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে এবং কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর ২০২৫, তবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে করদাতারা ২৪ ঘণ্টাই রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।
এনবিআর মনে করছে, প্রযুক্তিনির্ভর এই উদ্যোগ শুধু রাজস্ব ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ করবে না, বরং করদাতাদের জন্য কর বিষয়ক জটিলতাও অনেকটা সহজ করে দেবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ