
ছবি: সংগৃহীত
সময়ের আলোচিত অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া অভিনয়ে আগের মতো ব্যস্ত নন। বর্তমানে একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন তিনি। তবে সময়-সুযোগ হলে ভালো কাজের প্রস্তাব পেলে পর্দায় ফেরেন। অভিনয়ের বাইরেও তিনি প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয় নিয়ে মতামত দিয়ে থাকেন। তাঁর এসব পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার জন্ম দেয়। তবে এবার তাঁর পোস্টে ফুটে উঠেছে গভীর হতাশা, ক্ষোভ এবং নাগরিক অসহায়ত্ব।
সম্প্রতি ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাসে শবনম ফারিয়া বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক এবং প্রশাসনিক বাস্তবতা নিয়ে তাঁর ভেতর জমে থাকা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি সরাসরি প্রশ্ন করেন, “এমন এক দেশে জন্ম, কার কাছে বিচার দেব জানি না।”
তিনি বলেন, “এক পার্টির বড়রা টাকা মেরে বিদেশে পালাচ্ছে, আর ছোট কর্মীরা অনলাইনে ‘জুলাই সিডিআই’ টাইপ নাটক বানিয়ে সেই অন্যায়কে জায়েজ করতে ব্যস্ত। আরেক দল চাঁদাবাজি, হাদিয়া, ডোনেশনের ভাগ নিয়ে কামড়াকামড়ি করে নিজেদের জন্য ‘পারাপারের রাস্তা’ তৈরি করছে।”
এই অবস্থার মধ্যেই সাধারণ নাগরিকদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেছেন তিনি। নিজেকে সাধারণ মানুষ বলে উল্লেখ করে লেখেন, “মাঝখানে আমরা সাধারণ মানুষ, নীরব দর্শক হয়ে রঙিন তামাশা দেখি। কিছু বললেই এক পক্ষ বলে, ডলার খেয়েছেন, লাল স্বাধীনতা কেমন লাগে? অন্য পক্ষ বলে, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর! প্রশ্ন আসে—১৬ বছর কিছু বলেননি কেন?”
শবনম ফারিয়া আরও লিখেছেন, “এই সবুজ পাসপোর্টে কেউ এখন আর ভিসা দিচ্ছে না! কই যাব আমরা?”—এই বাক্যটিতে ফুটে উঠেছে তার আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের নৈতিক ও কূটনৈতিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ।
এই হতাশা, দুশ্চিন্তা এবং রাগের মূল কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফারিয়া বলেন, “এই স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে আমি আমার মত প্রকাশ বন্ধ করলাম। কারণ অবশেষে আমি বুঝে গেছি—আমরা জাতি হিসেবে অত্যন্ত বেহায়া এবং নির্লজ্জ। যত আন্দোলন হোক, যত সরকার পরিবর্তন হোক, যত নোবেলজয়ী বা সৎ মানুষ রাজনীতিতে আসুক, কোনো কিছুতেই লাভ নেই। কারণ, শিশু হোক, কিশোর হোক, বৃদ্ধ হোক—যেই ক্ষমতা পায়, সেই-ই তার অপব্যবহার করে!”
এই বক্তব্য অনেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ তার সাহসিকতাকে স্বাগত জানিয়েছেন, আবার কেউ কেউ সমালোচনাও করেছেন। তবে ফারিয়া তার বক্তব্যে স্পষ্ট ছিলেন—এই রাষ্ট্রে নৈতিকতা হারিয়ে গেছে এবং মানুষ এখন সত্য বলতেও ভয় পায়।
শবনম ফারিয়া এর আগেও নানা জাতীয় ইস্যুতে সরব ছিলেন। চলতি বছরের শুরুতে ‘চব্বিশের অভ্যুত্থান’ নামে পরিচিত রাজনৈতিক পালাবদলের সময়ও তিনি সরব ভূমিকা রেখেছিলেন। সে সময় তিনি ছিলেন প্রতিবাদী কণ্ঠের একজন। কিন্তু রাজনৈতিক নৈরাজ্য এবং ক্ষমতার দৌড়ে হারের কৌশল দেখে হতাশ হয়ে পড়েছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
তাঁর মতে, এই দেশ শুধুই ক্ষমতার দৌড়ে বিভ্রান্ত। জনগণ সেখানে কেবল মূক দর্শক। যে যার মত সুবিধা নিতে ব্যস্ত। কেউ অনলাইনে ক্যাম্পেইন করে, কেউ আন্দোলনের নামে চাঁদাবাজি করে, আবার কেউ অন্যের দুর্নীতি ঢাকতে গুজব ছড়ায়।
এই পোস্টের মধ্য দিয়ে এক অর্থে শবনম ফারিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিকে বিদায় জানিয়েছেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন, এখানে বলার কিছু নেই, বোঝানোরও কিছু নেই। এক নিরব আশাহীনতার মধ্যেই তিনি তার স্ট্যাটাসের ইতি টানেন।
নাগরিক সমাজের একাংশ বলছে, শবনম ফারিয়ার মতো তরুণ, শিক্ষিত ও জনপ্রিয় মুখের এমন হতাশা নিছক আবেগ নয়—এটি রাষ্ট্র পরিচালনায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অব্যবস্থাপনার একটি বহিঃপ্রকাশ।
একজন অভিনেত্রী যখন এই ভাষায় কথা বলেন, তখন বুঝতে কষ্ট হয় না—রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ