
ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি রাজধানীতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ এবং সেখানে সেনা কর্মকর্তার জড়িত থাকার গুঞ্জন দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই গোপন বৈঠকের পেছনে পরিকল্পিত নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা চলছে বলে সন্দেহ করছেন নিরাপত্তা বাহিনী। বিশেষ করে ৫ থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করতে পারে এমন আশঙ্কায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং কঠোর প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
গত ৮ জুলাই বসুন্ধরা এলাকার ‘কে বি কনভেনশন হলে’ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মিলিয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ জন অংশগ্রহণ করেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। পুলিশ মামলায় উল্লেখ করেছে, বৈঠকে শেখ হাসিনার দেশে ফেরা বাধাগ্রস্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে সারাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য ছিল।
ভাটারা থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিদেশে লোক পাঠানোর ছদ্মবেশে বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের পাঠানো হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে মেজর পদমর্যাদার এক সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেয়। সেনাবাহিনীও অভিযুক্ত মেজর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে এবং প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায়।
২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়কে ঘিরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, আবাসিক হোটেল, মেস ও নেতাকর্মীদের ফ্ল্যাটে নিয়মিত অভিযান চলছে। নাশকতা করতে পারে এমন বস্তি এলাকা নিয়েও গভীর নজরদারি এবং চিরুনি অভিযান চলছে, যা পুরো আগস্ট মাস জুড়ে চলবে।
ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর আট নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ২৫৪ জনকে বিভিন্ন অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার চেষ্টা রয়েছে বলে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেছে।
একই সময়ে ৫০টি থানায় প্রায় ৪৮৯টি টহল টিম মাঠে দায়িত্ব পালন করছে এবং ৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। মোবাইল, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক জব্দ করা হয়েছে।
আগামী ৩ আগস্ট শাহবাগ মোড়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সমাবেশ এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এসব অনুষ্ঠানের সময় তৃতীয় পক্ষের কোনো নাশকতা যাতে না ঘটে, সেজন্য পুলিশ বিশেষ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম জানিয়েছেন, পুরো আগস্ট মাস জুড়ে রাজধানীর প্রতিটি থানার টিম, চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম জোরদার থাকবে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কোনো তথ্য উড়িয়ে দিচ্ছি না, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং আগাম তথ্য সংগ্রহে সক্রিয়ভাবে কাজ করছি।’ তিনি আরও জানিয়েছেন, শুধু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এবং আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার চেষ্টায় যুক্তদের গ্রেফতার করা হচ্ছে; কোনো নির্দিষ্ট বা হয়রানিমূলক গ্রেফতারির সুযোগ নেই।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, আগস্টের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যেকোনো ধরনের নাশকতা রুখতে র্যাবের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। অতিরিক্ত চেকপোস্ট ও পেট্রলিং বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দলের কিছু অংশ এখনও আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টের অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। গোয়েন্দা তথ্য ও গ্রেফতারকৃতদের মাধ্যমে বিষয়টির গভীরে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। তদন্তের পর আসল রহস্য উদঘাটিত হলে বাস্তব চিত্র দেশবাসীর সামনে আসবে।
এদিকে পুলিশের এই ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে রাজধানীর সাধারণ জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা বেড়েছে, তবে সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। সবাই এখন অপেক্ষায় আছে ৫ ও ৮ আগস্টের—এই দুই দিনকে ঘিরে পরিস্থিতি কতটা শান্তিপূর্ণ বা অশান্তিপূর্ণ হবে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের ‘গোপন বৈঠক’ থেকে শুরু হওয়া পরিকল্পিত নৈরাজ্যের আশঙ্কায় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি ও চিরুনি অভিযান জোরদার হয়েছে। আবাসিক হোটেল, মেস, ফ্ল্যাট এবং বস্তি এলাকায় অভিযান অব্যাহত থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও র্যাব সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ৫ ও ৮ আগস্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে কোনো নাশকতা যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করা হয়েছে। পুরো আগস্ট মাসজুড়ে রাজধানী ও দেশের অন্যান্য বড় শহরে চলমান থাকবে এই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ