
ছবি: সংগৃহীত
২০২৫-২৬ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিল কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এবারের রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়ায় বড় একটি পরিবর্তন এসেছে—সরকার চারটি শ্রেণি বাদে দেশের সব ব্যক্তি করদাতার জন্য ই-রিটার্ন (অনলাইনে আয়কর রিটার্ন) দাখিল বাধ্যতামূলক করেছে। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর প্রথম দিনেই করদাতাদের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সেই উদ্বোধনের দিন, অর্থাৎ সোমবার (৫ আগস্ট) দিনশেষে মোট ১০ হাজার ২০২ জন করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছেন—যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় পাঁচগুণ বেশি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর পক্ষ থেকে জনসংযোগ কর্মকর্তা আল-আমিন শেখ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২০২৪-২৫ করবর্ষে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল কার্যক্রমের প্রথম দিনে রিটার্ন জমা দিয়েছিলেন মাত্র ২ হাজার ৩৪৪ জন করদাতা। অথচ চলতি করবর্ষে প্রথম দিনেই সেই সংখ্যা ১০ হাজার পেরিয়েছে, যা ই-রিটার্ন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ও আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ার বড় প্রমাণ।
২০২৪-২৫ করবর্ষে মোট ১৭ লাখ করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিয়েছিলেন। এবারের করবর্ষে সেই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে প্রত্যাশা করছে এনবিআর।
চলতি করবর্ষে সবার জন্য ই-রিটার্ন বাধ্যতামূলক হলেও চারটি শ্রেণির করদাতা এই বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড় পেয়েছেন। তারা হলেন— ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রবীণ করদাতা, শারীরিকভাবে অক্ষম বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন করদাতা, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিক করদাতা এবং মৃত করদাতার পক্ষে আইনগত প্রতিনিধি।
তবে এই চার শ্রেণির করদাতা ইচ্ছা করলে অনলাইনেই রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। তাদের জন্য বাধ্যতামূলক না হলেও সুযোগ উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যদি কোনো করদাতা ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সমস্যা অনুভব করেন এবং সে কারণে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে তিনি চূড়ান্ত সময়সীমার (৩১ অক্টোবর) মধ্যে উপকর কমিশনার বরাবর যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করে আবেদন করতে পারবেন।
যদি করদাতার আবেদন যৌক্তিক বিবেচিত হয়, তাহলে অতিরিক্ত বা যুগ্ম কর কমিশনারের অনুমোদনে তাকে পেপার রিটার্ন জমা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হতে পারে। তবে এটি শুধুই ব্যতিক্রমধর্মী পরিস্থিতিতে বিবেচনায় আনা হবে।
বর্তমানে করদাতারা ঘরে বসেই তাদের কর পরিশোধ ও রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। কর পরিশোধের পদ্ধতিও অত্যন্ত সহজ ও সুবিধাজনক করা হয়েছে। করদাতারা নিচের যেকোনো মাধ্যম ব্যবহার করে আয়কর পরিশোধ করতে পারবেন— ব্যাংক ট্রান্সফার, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস): বিকাশ, রকেট, নগদ ইত্যাদি।
রিটার্ন দাখিল সম্পন্ন হওয়ার পর করদাতা তাৎক্ষণিকভাবে একটি প্রাপ্তি স্বীকারপত্র (Acknowledgement Receipt) এবং আয়কর সনদ (Tax Certificate) অনলাইনে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন। ফলে পূর্বের মতো দীর্ঘসময় অপেক্ষা, অফিসে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানো, কিংবা মাঝপথে নানা জটিলতার সম্মুখীন হওয়ার ঝামেলা থেকে রেহাই মিলেছে।
অনলাইন রিটার্ন দাখিলে সমস্যা হলে করদাতারা যেন সহায়তা পান, সেজন্য এনবিআর কেন্দ্রীয় কল সেন্টার, লাইভ চ্যাট সাপোর্ট, ই-মেইল সাপোর্ট এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সহায়তা প্রদান করছে।
বিশেষজ্ঞ কর্মীরা যেকোনো কারিগরি সমস্যা কিংবা ধাপে ধাপে গাইডলাইনের মাধ্যমে করদাতাকে সহযোগিতা করে থাকেন। ফলে নতুন করদাতাদের জন্যও অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের প্রক্রিয়াটি হয়ে উঠছে সহজ, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে করদাতাদের অনুরোধ জানানো হয়েছে, রিটার্ন জমার শেষ তারিখ ৩১ অক্টোবরের আগে যেন সবাই তাদের ই-রিটার্ন দাখিল সম্পন্ন করেন। এতে অনাকাঙ্ক্ষিত ভিড়, প্রযুক্তিগত জটিলতা কিংবা জরিমানা পরিহার করা সম্ভব হবে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা মনে করছেন, আগামী দিনগুলোতে করদাতাদের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে এবং আয়কর রিটার্ন দাখিলে ডিজিটাল পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতা আরও দৃঢ় হবে।
বাংলাবার্তা/এসজে