ছবি: সংগৃহীত
গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ৪২ শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে দ্রুত ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে এমন দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে নেওয়া বিদেশি ঋণের পরিশোধ এখন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেট রিপোর্ট ২০২৫–এ এ তথ্য তুলে ধরে রবিবার (৭ ডিসেম্বর) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের ওপর বিদেশি ঋণের চাপ বাড়ছে। সরকার বিদেশি ঋণ নিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিমানবন্দরের টার্মিনাল, নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বড় বড় প্রকল্প করেছে। সেগুলোর কয়েকটির ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে। শিগগিরই আরও কয়েকটির শুরু হবে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, কোভিডের পর থেকেই বিদেশি ঋণ বৃদ্ধি ও ঋণ পরিশোধের চাপ নিয়ে আলোচনা চলছে। উন্নয়ন সহযোগীরা এখন গ্রেস পিরিয়ড, পরিশোধের সময়সীমা (ম্যাচুরিটি), সুদের হারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আগের তুলনায় কঠোর শর্ত দিচ্ছে। ফলে সুদ ও আসল পরিশোধের চাপ ক্রমান্বয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে, যা অর্থনীতিতে বাড়তি চাপ তৈরি করছে। তিনি আরও জানান, আগে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের ঋণ টেকসই–সংক্রান্ত (ডেট সাসটেইনিবিলিটি) প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ‘লো’ ঝুঁকির তালিকায় ছিল; এখন দেশটিকে ‘মডারেট’ ঝুঁকিতে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিদেশি ঋণের চাপ কমাতে কী করতে হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদ হোসেন বলেন, দুটি কাজ করতে হবে। এক. রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে হবে। দুই. যেসব বিদেশি ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেই ঋণ দিয়ে এমন প্রকল্প করতে হবে যেন তা বিদেশি মুদ্রা আয়ে বেশি সহায়তা করে। তিনি বলেন, ‘ঋণের চাপ কমাতে না পারলে ভবিষ্যতে দুর্দশা আছে।’
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার ৪৪৮ কোটি ডলার। তুলনা করলে দেখা যায়, পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ২০২০ সালে এটি ছিল ৭ হাজার ৩৫৫ কোটি ডলার। এই সময়ে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৪২ শতাংশ। হিসাবটি সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের ঋণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অতীতের সরকারি-বেসরকারি খাতের ঋণের সুদ ও মূল পরিশোধের পরিমাণ গত পাঁচ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২০ সালে এই ধরনের ঋণের জন্য ৩৭৩ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল, যা ২০২৪ সালে বেড়ে প্রায় ৭৩৫ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবে ঋণ ছাড়ের পরিমাণ তেমন বৃদ্ধি পায়নি। ২০২৪ সালে সরকারি-বেসরকারি খাতের ঋণ ছাড়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১১০ কোটি ডলার, যেখানে পাঁচ বছর আগে এটি ছিল ১ হাজার ২২ কোটি ডলার।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে রপ্তানির তুলনায় এই ঋণের পরিমাণ ছিল ১৯২ শতাংশ। ওই বছরে মোট ঋণ পরিষেবা রপ্তানির ১৬ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের চাপ দ্রুত বাড়ছে, এমন দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ—এমন মন্তব্য করা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে। তবে বাংলাদেশ কত নম্বর আছে, তা প্রতিবেদনে বলা হয়নি। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার নামও আছে। বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ঋণ পায়। আইডিএর ঋণের ৩০ শতাংশই পায় বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তান। মোট ঋণের প্রায় ২৬ শতাংশই বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে পেয়েছে বাংলাদেশ। এরপর আছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



