
ছবি: সংগৃহীত
বন্ধুত্ব একটি অমূল্য সম্পদ, যার গহীনতা ছোট শব্দে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। বন্ধুত্ব জীবনের প্রতি মুহূর্তকে রঙিন করে, সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে পাশে দাঁড়ায়। বিশ্ব বন্ধু দিবস উপলক্ষে দেশের জনপ্রিয় চার অভিনেত্রী—বাঁধন, বিদ্যা সিনহা মিম, রুনা খান ও তমা মীর্জা—গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তাদের জীবনের প্রিয় বন্ধুদের কথা তুলে ধরেছেন, যাদের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বের স্মৃতি ও জীবনের নানা মুহূর্তের গল্প রয়েছে।
বাঁধনের বন্ধুত্ব: কাজিন থেকে ছোট ভাই পর্যন্ত
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন তার প্রিয় বন্ধুদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন সিনথিয়া, শান্তা ও রিতির নাম। পাশাপাশি তার কাজিন সামিয়া ও ছোট ভাই রাশাও তার অন্তরঙ্গ বন্ধুদের অন্তর্ভুক্ত। বাঁধন বলেন, জীবনে ভালো বন্ধু থাকা প্রয়োজন, কারণ বন্ধুত্ব জীবনের ইতিবাচক শক্তি। তিনি বিশ্বাস করেন, ‘সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে’—অর্থাৎ ভালো সঙ্গীর প্রভাব মানুষকে উন্নতির পথে নিয়ে যায়। বাঁধন আরও জানান, যদিও প্রতিদিন তার বন্ধুরা সঙ্গে দেখা হয় না, তবুও প্রয়োজনে সবাই একে অপরের পাশে থাকে, এটাই প্রকৃত বন্ধুত্বের অর্থ। বন্ধু দিবসে তিনি তার সকল বন্ধুকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং ভালো বন্ধু পাওয়ার জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করেছেন।
বিদ্যা সিনহা মিমের স্কুলজীবনের স্বর্ণময় স্মৃতি
প্রিয় বন্ধুর তালিকায় বিদ্যা সিনহা মিমের প্রাথমিক স্কুলের বন্ধু মনিশার নাম রয়েছে। তার সঙ্গে বন্ধুত্বের শুরু হয় ক্লাস এইটে। কুমিল্লায় নার্সারিতে পড়ার সময় তার আরও দুজন বন্ধু—বুশরা ও পর্ণিয়া—হতে থাকে। মিমের জীবনে ছোট বোন মনি তাঁর সবচেয়ে কাছের বন্ধু হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। তিনি জানান, ছোটবেলায় অনেক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও এখন সবাই ব্যস্ত, আর কিছু বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক আগের মত নেই। তবে বন্ধু দিবসে স্কুলজীবনের স্মৃতি ফিরে এসে মজা করতাম, কেউ কেউ উপহার দিত, সারপ্রাইজ আয়োজন করতাম। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়েও তারা বন্ধু দিবস উদযাপন করতেন। মিম বলেন, এখনও বন্ধু দিবস তার কাছে বিশেষ দিন।
রুনা খানের জীবন সঙ্গী ও সখীপুরের স্মৃতির বন্ধুরা
অভিনেত্রী রুনা খান তার জীবনের সেরা বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছেন তার জীবন সঙ্গীকে। তিনি বলেন, জীবন সঙ্গী ছাড়াও তার আরও কিছু অন্তরঙ্গ বন্ধু আছেন, যারা প্রচারের বাইরে থাকতে পছন্দ করেন। স্কুলজীবনে সখীপুর গার্লস স্কুলের বন্ধু মনি, মিতু, লিপি ও রূপার সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক ছিল। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুর মধ্যে মুমু, সাবিনা ও লিপির নাম বিশেষভাবে স্মরণ করেছেন তিনি। কর্মক্ষেত্রে নানা নতুন বন্ধু হয়েছে, যাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে যদিও নিশ্চিত নন তারা তাকে বন্ধু মনে করেন কি না। রুনা জীবনের প্রতিটি দিবস, বিশেষ করে মা দিবস, বাবা দিবস ও বন্ধু দিবস, সেলিব্রেট করতে পছন্দ করেন।
তমা মীর্জার বন্ধুত্বের দর্শন: প্রতিদিনই বন্ধু দিবস
তমা মীর্জা মনে করেন, বন্ধুত্বের সার্থকতা হলো বন্ধুর পাশে থাকা, শুধু ভালো সময় নয়, বরং দুঃসময়েও। তার মতে, বন্ধুর সুখ-দুঃখ, ভালো-খারাপ সময় একসঙ্গে কাটানোই প্রকৃত বন্ধুত্বের পরিচয়। তমা বলেন, তার কাছে প্রতিদিনই বন্ধু দিবস, কারণ তিনি প্রতিদিনই বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। এই মুহূর্তে তার সবচেয়ে কাছের বন্ধুদের মধ্যে লিজা ও মিথিলার নাম উল্লেখ করেন। এ ছাড়াও তার মা তাঁকে বন্ধুর মতো পাশে থেকেছেন। তমা বন্ধু দিবসে সব বন্ধুর জন্য ভালোবাসা ও আশীর্বাদ জানিয়ে শেষ করেন।
বন্ধুত্ব: জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ
চার এই তারকার কথা থেকে স্পষ্ট যে, বন্ধুত্ব শুধুমাত্র একটি সম্পর্ক নয়, এটি জীবনের একটি অপরিহার্য স্তম্ভ। বন্ধুত্বের মাধ্যমে তারা জীবনের ওঠাপড়া, আনন্দ ও দুঃখ ভাগাভাগি করে নেন। প্রতিটি বন্ধুর সঙ্গে বিশেষ স্মৃতি ও সম্পর্ক তাদের জীবনের নানা দিককে প্রভাবিত করেছে।
বিশ্ব বন্ধু দিবস তাদের জন্য একটি বিশেষ উপলক্ষ যেখানে তারা বন্ধুত্বের মূল্যায়ন করেন, পুরনো স্মৃতিতে ফিরে যান এবং পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। বন্ধুত্ব শুধু আনন্দের সময়ই নয়, বিপদ ও সংকটেও পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে পারস্পরিক সমর্থনের নাম।
বন্ধুত্বের শিক্ষা: ভালো বন্ধু জীবনের সেরা সম্পদ
বাঁধনের মত চিন্তা করার লোকরা জানেন ভালো বন্ধু পাওয়া আল্লাহর বড় নেয়ামত। মিম, রুনা ও তমা সবাইই জীবনের প্রতিটি ধাপে বন্ধুত্বের গুরুত্ব অনুভব করেছেন। তারা বন্ধুদের সঙ্গে স্মৃতি গড়ে তুলেছেন যা জীবনজুড়ে শক্তি ও উৎসাহ যুগিয়েছে।
বন্ধুত্ব শুধু ব্যক্তিগত সম্পর্ক নয়, এটি মানসিক শান্তি ও সুখের উৎস। তাই বন্ধুত্বের জন্য সময় বের করা, সঠিক বন্ধুকে চিনে নেওয়া ও ভালোবাসা বজায় রাখা প্রত্যেকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই বন্ধুত্বের বন্ধন যত মজবুত হবে, জীবন তত বেশি সুন্দর হয়ে উঠবে।
বিশ্ব বন্ধু দিবসে এই চার তারকার বন্ধুত্বের গল্প আমাদের শেখায়—বন্ধুত্ব জীবনের এক অমূল্য ধন, যার মর্যাদা ও গুরুত্ব সর্বকালের জন্য অটুট থাকা প্রয়োজন। ভালো বন্ধু পেলে জীবন হয় আলোয় ভরা, হতাশা দূরে থাকে, আর প্রতিটি দিন হয়ে ওঠে উৎসবমুখর।
বাংলাবার্তা/এমএইচ