
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমনি নিজের জীবনের এক কঠিন বাস্তব অধ্যায়কে এবার শিল্পে রূপ দিচ্ছেন। চার বছর আগে ঘটে যাওয়া এক ঝড়ো অভিজ্ঞতা—মাদক মামলায় গ্রেপ্তার, রিমান্ড ও কারাবাস—নিয়ে এবার পরী নিজেই পর্দায় হাজির হচ্ছেন এক নতুন চরিত্রে, যেখানে বাস্তব আর কল্পনার সীমারেখা হবে খুবই সূক্ষ্ম।
২০২১ সালের আগস্টে রাজধানীর বনানীতে নিজের বাসা থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হাতে গ্রেপ্তার হন পরীমনি। বিকেল থেকে শুরু হয়ে টানা চার ঘণ্টা ধরে চলে অভিযানের নাটকীয়তা, যা পরিণত হয় দেশের অন্যতম আলোচিত ঘটনায়। র্যাবের সদস্যরা তার বাসা তল্লাশি করে মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করে। পরে তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। সেই মামলাতেই তিন দফায় মোট সাত দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয় পরীকে।
সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে পরীমনি সেই দিনগুলোর স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, “রিমান্ড একটা ফালতু জিনিস। ওটা এমন একটা জায়গা, যেখানে কাউকে ভয় দেখানোর জন্য নানা রকম ছবি টাঙানো থাকে—কিন্তু মানুষ এসব দেখে ভয় পায় না। আমি তখনই বলেছিলাম, এই ছবিগুলো বদলানো দরকার।”
পরীর মতে, রিমান্ডে মানুষকে শুধু মানসিকভাবে ভাঙার চেষ্টা করা হয়। তিনি বলেন, “আমাকে কেন আটক করা হলো, সেটা ওরা নিজেরাই জানত না। একে অপরকে জিজ্ঞেস করছিল—‘এই মেয়েকে কেন এনেছি?’ ওরা নিজেরাই বিভ্রান্ত ছিল।”
কারাগারে থাকাকালীন সময়ও পরীমনি নিজের অভিজ্ঞতা নথিভুক্ত করেছিলেন। তিনি জানান, “জেল থেকে বের হয়েই আমি আমার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা বই লিখেছি। সেই বই এখনো প্রকাশ করিনি। আমার ছেলে বড় হয়ে একদিন বইটা প্রকাশ করবে।”
বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়েও তিনি সিনেমা বানানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। পরীর ভাষায়, “চাইলে এটাকে সিনেমায় রূপ দিতে পারি। এটা শুধু আমার গল্প নয়, এটা অনেক মেয়ের গল্প—যাদেরকে সমাজ বিচার করেছে, অথচ তারা কখনো নিজেদের কথা বলার সুযোগ পায়নি।”
কারাগারে নির্যাতনের প্রশ্নে পরীমনির মন্তব্য ছিল সংযত কিন্তু গভীর। তিনি বলেন, “জেলখানা নিয়ে আমি কোনোদিন কিছু বলিনি, বলতেও চাই না। কারণ সত্যিটা মানুষ জানলে আইনের ওপর শ্রদ্ধা হারাবে।”
তবে তিনি কারাগারের খাবার প্রসঙ্গে ভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা জানান। “জেলের খাবার আসলে অনেক স্বাস্থ্যকর। অনেক সময় খাবার নষ্টও হয়, কারণ রান্না হয় ফ্রেশভাবে। জায়গাটা অনেক ওয়েল মেইনটেইনড। এই দিকটা আমাকে অবাক করেছিল,” বলেন পরীমনি।
এই অভিজ্ঞতা কেবল পরীর জীবনের একটি অধ্যায় নয়, বরং সমাজ ও আইনি ব্যবস্থার নানা বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। তার আসন্ন সিনেমাটি হবে সেই বাস্তবতার প্রতিবিম্ব, যেখানে দেখা যাবে একজন নারী কিভাবে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মুখোমুখি হয়ে নিজেকে খুঁজে পান।
বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে বাস্তব ঘটনার ওপর ভিত্তি করে সিনেমা নতুন নয়, তবে কোনো তারকার নিজের জীবনের বিতর্কিত অধ্যায়কে নিজেই সিনেমায় রূপ দেওয়া বিরল ঘটনা। পরীমনির এই সিদ্ধান্ত তাই কেবল একটি শিল্পীসত্তার প্রকাশ নয়—এটি একধরনের আত্মমুক্তি, এক নারী শিল্পীর নিজের জীবনের ভয়াবহ সত্যকে তুলে ধরার সাহসিকতা।
তার ভাষায়, “জীবনের প্রতিটি অভিজ্ঞতা কোনো না কোনোভাবে আমাদের তৈরি করে। আমি চাই আমার গল্প অন্যদের মনে শক্তি জোগাক। মানুষ জানুক, অন্ধকারের ভেতর থেকেও আলো খুঁজে পাওয়া যায়।”
এখন দেখার বিষয়—রিমান্ড ও কারাবাসের সেই অভিজ্ঞতা কীভাবে ফুটে ওঠে বড় পর্দায়, আর দর্শকরা কেমনভাবে গ্রহণ করেন পরীমনির এই আত্মস্বীকারোক্তিমূলক যাত্রা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ