
ছবি: সংগৃহীত
চলতি বছরের হজযাত্রী নিবন্ধন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে দিন দিন। রোববার (১২ অক্টোবর) রাত ১২টার মধ্যে নিবন্ধনের নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হলেও এখন পর্যন্ত কোটার তিন ভাগের একভাগও পূরণ হয়নি। এতে করে বাংলাদেশের বিশাল হজ কোটা এবারও পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সৌদি আরবের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে—যদি সময় বাড়ানোর সুযোগ মেলে, তাহলে অতিরিক্ত সময় ঘোষণা করা হতে পারে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ পোর্টালের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত মোট ৩৭ হাজার ৮১০ জন হজযাত্রী প্রাথমিক নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় মাত্র ৩ হাজার ৬৭২ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩৪ হাজার ১৩৮ জন নিবন্ধিত হয়েছেন। অথচ, চলতি বছর সৌদি সরকারের নির্ধারিত বাংলাদেশের মোট হজ কোটা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। অর্থাৎ, এখনও প্রায় ৯০ হাজারেরও বেশি আসন খালি রয়েছে, যা দেশের মোট কোটার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি।
এ অবস্থায় হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সময় বাড়ানোর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন জানিয়েছে। সংস্থাটির নেতারা বলেছেন, পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতা, অর্থনৈতিক সংকট এবং বিমান ভাড়ার অনিশ্চয়তা অনেক হজপ্রত্যাশীকে এখনো নিবন্ধনে অনীহা করছে। তারা প্রস্তাব দিয়েছেন, নিবন্ধনের সময়সীমা কমপক্ষে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হলে আরও অন্তত ৫০ হাজারের বেশি হজযাত্রী নিবন্ধন করতে পারবেন।
হাবের সভাপতি জানিয়েছেন, “অনেক হজপ্রত্যাশীর পাসপোর্ট নবায়ন বা নতুন পাসপোর্ট সংগ্রহের প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। অনেকে টাকার ব্যবস্থাপনা করছেন। এ কারণে সময় বাড়ানো জরুরি।”
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হজ নিবন্ধনের সময়সীমা মূলত সৌদি সরকারের রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। তাদের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে নিবন্ধন ১২ অক্টোবর মধ্যরাতেই শেষ হওয়ার কথা। ফলে, সময় বাড়াতে হলে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন নিতে হবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তাদের অনুমতি মিললে বাংলাদেশে নিবন্ধনের সময় আরও কয়েকদিন বাড়ানো হবে। তবে এটি পুরোপুরি সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবার হজযাত্রী নিবন্ধনের হার এত কম থাকার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, অর্থনৈতিক সংকট—বর্ধিত ডলার দর ও বিমানের টিকিটমূল্য বৃদ্ধির কারণে অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত হজযাত্রী পিছিয়ে যাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, পাসপোর্ট ও ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা, বিশেষ করে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট নবায়নে সময় লাগছে। তৃতীয়ত, চলতি বছর সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজ প্যাকেজের ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
ধর্ম বিষয়ক বিশ্লেষক মাওলানা হেলাল উদ্দিন বলেন, “একটি পরিবার থেকে দুজন বা তিনজনের হজে যাওয়া এখন অনেকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। হজ এখন পুরোপুরি আর্থিকভাবে সচ্ছলদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে।”
ধর্ম মন্ত্রণালয় আশাবাদী, সৌদি আরব সময় বাড়াতে রাজি হলে নিবন্ধনের সংখ্যা দ্রুত বাড়বে। কর্মকর্তারা বলছেন, “গতবারও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে সময় বাড়ানোয় হাজার হাজার মানুষ নিবন্ধন করেন। এবারও একই আশা করছি।”
একই সঙ্গে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যারা ইতোমধ্যে প্রাথমিক নিবন্ধন করেছেন কিন্তু টাকা জমা দেননি, তাদের অর্থ পরিশোধ ও কনফার্মেশন প্রক্রিয়াও সময়সাপেক্ষ হতে পারে। এজন্য মন্ত্রণালয় সময় বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টে নিবন্ধন নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টে হজ নিবন্ধন সম্ভব নয়, তবে যাদের নবায়নের আবেদন প্রক্রিয়াধীন আছে, তারা পাসপোর্ট নম্বর ও রসিদ দিয়ে অস্থায়ীভাবে প্রাথমিক নিবন্ধন করতে পারবেন। পরবর্তীতে নতুন পাসপোর্ট নম্বর যুক্ত করতে হবে।
সব মিলিয়ে চলতি বছর বাংলাদেশের হজযাত্রা কার্যক্রমের প্রস্তুতি এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। পরিবহন, ভিসা, হজযাত্রী প্রশিক্ষণ এবং মেডিকেল টিম গঠনের কাজও নিবন্ধনের হারে ধীর গতিতে এগোচ্ছে। ফলে ধর্ম মন্ত্রণালয় দ্রুত সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিবন্ধনের সময় বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে।
যদি সময় বাড়ে, তাহলে আগামী দুই সপ্তাহে বাকি প্রায় ৯০ হাজার হজযাত্রী নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন। তবে সৌদি অনুমোদন না এলে এ বছর বাংলাদেশের কোটার উল্লেখযোগ্য অংশ খালি থেকে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
সংক্ষেপে:
-
মোট কোটা: ১,২৭,১৯৮
-
নিবন্ধিত: ৩৭,৮১০ (সরকারি ৩,৬৭২ + বেসরকারি ৩৪,১৩৮)
-
পূরণ হয়েছে: প্রায় ৩০%
-
সময় বাড়ানোর আবেদন: ৫ নভেম্বর পর্যন্ত
-
সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে সৌদি সরকারের অনুমতির ওপর
বাংলাবার্তা/এমএইচ