
ছবি: সংগৃহীত
তরুণ প্রজন্মের (জেনারেশন জেড) বিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে রাজোয়েলিনা। দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা ও একাধিক সরকারি কর্মকর্তার বরাতে আজ সোমবার বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
একটি সামরিক সূত্র রয়টার্সকে জানায়, রাজোয়েলিনা ফরাসি সামরিক উড়োজাহাজে করে দেশ ছাড়েন। ফরাসি রেডিও আরএফআই জানায়, তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে একটি চুক্তি করেছেন।
প্রেসিডেন্টের কার্যালয় সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। তবে পরে কোনো মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
সূত্র জানায়, মাদাগাস্কারের সেন্ট মারি বিমানবন্দরে ফরাসি সেনাবাহিনীর একটি 'কাসা' বিমান অবতরণ করে। পাঁচ মিনিট পর একটি হেলিকপ্টার এসে এক যাত্রীকে ওই বিমানে স্থানান্তর করে। ওই যাত্রীই ছিলেন রাজোয়েলিনা।
পানি ও বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর মাদাগাস্কারে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে দুর্নীতি, দুর্বল শাসন, ও মৌলিক সেবার দাবিতে দ্রুত তা বৃহত্তর আন্দোলনে রূপ নেয়।
তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিট গত সপ্তাহে যোগ দেয়। তারা জানায়, তারা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাবে না।
দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা ও সংসদ সদস্য সিতেনি র্যানদ্রিয়ানাসোলোনিয়াইকো রয়টার্সকে বলেন, 'সেনাবাহিনীর কয়েকটি ইউনিট বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।'
'আমরা প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি দেশত্যাগ করেছেন,' বলেন সিতেনি।
২০০৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা রাজোয়েলিনা ক্ষমতার চর্চার মধ্য দিয়ে ক্রমশ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তার ক্ষমতার মূল ভিত্তি 'ক্যাপসাট' নামে পরিচিত সেনাবাহিনীর বিশেষ ইউনিটটি শেষ পর্যন্ত তার সঙ্গে থাকেনি।
গত সপ্তাহে ইউনিটটি জানায়, তারা সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে এবং নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ দিয়েছে।
তখন রাজোয়েলিনা সতর্ক করেন যে, দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চলছে।
দেশটিতে বর্তমানে প্রেসিডেন্ট না থাকায় সংবিধান অনুযায়ী সিনেট প্রধান অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন।
প্রায় তিন কোটি জনসংখ্যার মাদাগাস্কারে অর্ধেকের বেশি মানুষের বয়স ২০ বছরের নিচে। দেশের তিন-চতুর্থাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬০ সালে স্বাধীনতার পর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশটির মাথাপিছু জিডিপি ৪৫ শতাংশ কমেছে।
বিশ্বের সর্বাধিক ভ্যানিলা উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিত মাদাগাস্কারের বৈদেশিক আয়ের মূল উৎসর মধ্যে আছে নিকেল, কোবাল্ট, টেক্সটাইল ও চিংড়ি রপ্তানি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ