
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্তির প্রয়াসে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা চৌধুরী, কানাডা প্রবাসী শমিত সোম, ইতালিভিত্তিক তরুণ ফাহামিদুল ইসলাম— এদের পর এবার নজর পড়েছে ইংলিশ ক্লাব ফুলহ্যামের প্রতিভাবান তরুণ ফারহান আলী ওয়াহিদের দিকে। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই ইংল্যান্ডের শীর্ষ পর্যায়ের একটি ক্লাবে নিজের প্রতিভার সাক্ষর রেখে চলেছেন এই তরুণ মিডফিল্ডার।
মাত্র ১২ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ক্লাব চেলসির অ্যাকাডেমি ছেড়ে ফুলহ্যামের যুবদলে নাম লেখান ফারহান। শুরু থেকেই নিজের প্রতিভার ছাপ রাখতে সক্ষম হন তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে গড়ে তোলেন ক্লাবের আস্থাভাজন খেলোয়াড় হিসেবে। বর্তমানে ফুলহ্যামের অনূর্ধ্ব-১৮ ও অনূর্ধ্ব-২১— উভয় দলেরই নিয়মিত মুখ ফারহান। গত মৌসুমে অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে ১৭ ম্যাচে ৭টি গোল করে তিনি নজর কাড়েন ক্লাব কর্তৃপক্ষের।
এছাড়া প্রিমিয়ার লিগ ইন্টারন্যাশনাল কাপে অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে অভিষেক ম্যাচেই গোল করে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দেন। তার অসাধারণ গতি, বল কন্ট্রোল, প্রতিপক্ষকে কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার দারুণ ক্ষমতা এবং গোলমুখে ধারালো উপস্থিতি— সবকিছু মিলিয়ে ক্লাবের কোচিং স্টাফদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনার অংশ।
সম্প্রতি ফুলহ্যামের সঙ্গে ফারহান আলী ওয়াহিদ সই করেছেন তার প্রথম পেশাদার চুক্তি। এটি শুধু তার ক্যারিয়ারে নয়, ভবিষ্যতের সম্ভাব্য জাতীয় দলীয় ক্যারিয়ারের দিক থেকেও এক বড় অর্জন। এই চুক্তির মাধ্যমে ফারহানের পেশাদার ফুটবল যাত্রা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে।
ফারহান নিজেও জানিয়েছেন, তার মূল লক্ষ্য এখন ফুলহ্যামের সিনিয়র দলে জায়গা করে নেওয়া। এই উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন পূরণের পরই তিনি জাতীয় দলের বিষয়টি নিয়ে ভাববেন বলে জানিয়েছেন।
যদিও বর্তমানে তার মনোযোগ পুরোপুরি ক্লাব ক্যারিয়ার গড়ার দিকে, তবে বাংলাদেশের সঙ্গে তার পারিবারিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক তাকে বিশেষভাবে সংযুক্ত করে রেখেছে। তার পারফরম্যান্স ও সম্ভাবনা দেখে অনেক বাংলাদেশি ফুটবল অনুরাগী এখনই তার জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখছেন।
ইউরোপের অত্যাধুনিক ট্রেনিং সিস্টেমে বেড়ে ওঠা, উন্নত ট্যাকটিক্যাল বোঝাপড়া ও ফিজিক্যাল ফিটনেস— এসব কিছুই যদি বাংলাদেশ দলের হয়ে ব্যবহার করা যায়, তবে নিঃসন্দেহে দল লাভবান হবে।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ফারহানের ওপর নজর রেখেছেন জাতীয় দলের স্কাউটিং ইউনিট ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিশেষ করে বাফুফের গ্লোবাল স্কাউটিং প্রোগ্রামের আওতায় প্রবাসী বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে ফারহান অন্যতম আকর্ষণীয় নাম হয়ে উঠেছেন।
এর আগে যেমন শমিত সোম, হামজা চৌধুরীর মতো ফুটবলারদের নিয়ে আলোচনা ছিল, তেমনি ফারহানকেও বাংলাদেশের ফুটবল ভবিষ্যতের সম্ভাব্য তারকা হিসেবে দেখছে ফেডারেশন।
বর্তমানে ফারহান ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী হলেও তার বাংলাদেশি শিকড় এবং দুই দেশের মধ্যে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানো অসম্ভব নয়। বাংলাদেশ দলে খেলতে হলে ফিফার কিছু প্রক্রিয়া ও নিয়ম অনুসরণ করে ফারহানকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রতিনিধিত্ব করতে হবে।
যদি তিনি বাংলাদেশের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন, তবে তা নিঃসন্দেহে দল ও দেশের ফুটবলের জন্য এক বড় মাইলফলক হতে পারে।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ ফুটবলের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো মানসম্পন্ন খেলোয়াড়ের ঘাটতি। ইউরোপে প্রশিক্ষিত ও প্রতিভাবান ফুটবলার ফারহান আলী ওয়াহিদের মতো তরুণদের জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে বাংলাদেশ ফুটবল একটি নতুন যুগে প্রবেশ করতে পারে।
এই মুহূর্তে হয়তো তিনি ক্লাব ক্যারিয়ারে মনোযোগী, কিন্তু ভবিষ্যতে লাল-সবুজের জার্সিতে তার উপস্থিতি কোটি ভক্তকে এনে দিতে পারে গর্ব, প্রত্যাশা ও আন্তর্জাতিক সাফল্যের স্বপ্ন।
ফারহান যদি বাংলাদেশের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন, তবে সেটি হবে শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য এক ঐতিহাসিক পালাবদল।
বাংলাবার্তা/এমএইচ