
ছবি: সংগৃহীত
এশিয়া কাপ ২০২৫ শুরু হতে চলেছে ৯ সেপ্টেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এই মহাগুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে নিজেদের প্রস্তুতি আরও নিখুঁত ও কার্যকর করতে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল খেলবে তিন ম্যাচের একটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ। প্রতিপক্ষ ইউরোপের অন্যতম উদীয়মান ক্রিকেট দল নেদারল্যান্ডস। সিরিজটি আয়োজিত হবে বাংলাদেশের নিজস্ব মাটিতে, সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে, এবং ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে ৩০ আগস্ট, ১ সেপ্টেম্বর ও ৩ সেপ্টেম্বর।
সোমবার (৪ আগস্ট) বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিরিজের সূচি ঘোষণা করে। এতে বলা হয়, আগামী ২৬ আগস্ট ঢাকায় পা রাখবে সফরকারী নেদারল্যান্ডস দল। সফরের চার দিনের মাথায়, ৩০ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টায় মাঠে গড়াবে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। পরবর্তী দুটি ম্যাচও হবে একই ভেন্যুতে, যথাক্রমে ১ ও ৩ সেপ্টেম্বর। প্রতিটি ম্যাচই শুরু হবে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায়, যা দর্শকদের জন্য উপভোগ্য সময় বলে মনে করছেন আয়োজকরা।
এই সিরিজ শুধুই আন্তর্জাতিক ম্যাচ নয়, বরং বাংলাদেশ দলের জন্য এশিয়া কাপের আগে নিজেদের ছন্দ ফিরে পাওয়ার এবং দলীয় সমন্বয় পরখ করার এক বিরাট সুযোগ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিকল্পনা অনুসারে, এই সিরিজকে সামনে রেখে জাতীয় দলের ২৫ সদস্যের একটি প্রাথমিক স্কোয়াড গঠন করা হয়েছে। এই স্কোয়াডের ক্রিকেটারদের নিয়ে ৬ আগস্ট থেকে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হবে ফিটনেস ক্যাম্প।
বিসিবি জানিয়েছে, এই ফিটনেস ক্যাম্প মূলত খেলোয়াড়দের শারীরিক সক্ষমতা, ফিটনেস লেভেল এবং ইনজুরি ঝুঁকি মূল্যায়নের জন্য আয়োজন করা হয়েছে। এরপর ১৫ আগস্ট শুরু হবে আনুষ্ঠানিক স্কিল ট্রেনিং ও অনুশীলন ক্যাম্প। সেখানে থাকবে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং এবং কন্ডিশন-ভিত্তিক অনুশীলনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব।
ক্যাম্প শেষে ২০ আগস্ট পুরো দল চলে যাবে সিলেটে, যেখানে চলবে টেকনিক্যাল ও ট্যাকটিক্যাল প্রস্তুতির চূড়ান্ত ধাপ। অনুশীলনের পাশাপাশি সিলেটে থাকবে প্রস্তুতি ম্যাচও, যা কোচিং স্টাফদের জন্য খেলোয়াড়দের বাস্তব পরিস্থিতিতে মূল্যায়নের সুযোগ করে দেবে। এই পর্ব থেকেই চূড়ান্ত স্কোয়াড নির্ধারণ করা হবে নেদারল্যান্ডস সিরিজ এবং পরে এশিয়া কাপের জন্য।
নেদারল্যান্ডস ক্রিকেট দল গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দারুণভাবে নিজেদের অবস্থান গড়ে তুলেছে। ২০২3 ওয়ানডে বিশ্বকাপে তারা কিছু চমকপ্রদ জয় তুলে নিয়ে আলোচনায় আসে। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশকে হারিয়ে ক্রিকেটবিশ্বে শক্ত বার্তা দিয়েছিল তারা।
তাদের বিপক্ষে এই হোম সিরিজ বাংলাদেশের জন্য হালকা প্রতিপক্ষ মনে হলেও আসলে এটি হতে পারে কঠিন চ্যালেঞ্জ। কারণ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ইউরোপীয় দলগুলো বিশেষত আক্রমণাত্মক ব্যাটিং এবং স্পিনের বিরুদ্ধে আগ্রাসী খেলার কারণে হঠাৎ করে ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে।
বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এই সিরিজকে দলের সামগ্রিক কৌশল পরীক্ষা ও তরুণ খেলোয়াড়দের মঞ্চে তুলে আনার সুযোগ হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে যেসব ক্রিকেটার মূল একাদশে জায়গা করে নিতে মুখিয়ে আছেন, তাদের জন্য এটি হবে প্রমাণের সেরা মঞ্চ।
পুরো সিরিজটি অনুষ্ঠিত হবে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে, যা দেশের অন্যতম সুন্দর এবং আধুনিক অবকাঠামোসম্পন্ন স্টেডিয়াম হিসেবে পরিচিত। সেখানে ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছে মাঠ কর্তৃপক্ষ। পিচ এবং আউটফিল্ড প্রস্তুত করার পাশাপাশি দর্শক ব্যবস্থাপনাও উন্নত করা হচ্ছে।
সিলেটের দর্শকদের মধ্যে এই সিরিজ নিয়ে আগ্রহ বেশ প্রবল। করোনার পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার পর দর্শকরা এখানে নিয়মিত ভালো সাড়া দিচ্ছে। আয়োজকরা মনে করছেন, ঘরের মাঠে খেলোয়াড়রা দর্শকদের সমর্থনে আরও অনুপ্রাণিত হবে।
এই সিরিজকে ঘিরে বিসিবি নির্বাচক প্যানেলের ওপরও বাড়তি দায়িত্ব পড়েছে। বিশ্বকাপ এবং এশিয়া কাপের আগে দল গঠনে চূড়ান্ত মূল্যায়ন এই সিরিজ থেকেই করা হবে। সিনিয়র ক্রিকেটারদের পাশাপাশি তরুণ প্রতিভাদের পারফরম্যান্সও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
অন্যদিকে ইনজুরি থেকে ফিরেছেন এমন ক্রিকেটারদের ফর্ম ও ফিটনেসও এই সিরিজেই খতিয়ে দেখা হবে। বিশেষ করে পেসারদের রোটেশন, স্পিন আক্রমণের ভারসাম্য এবং মিডল অর্ডার ব্যাটিং অর্ডারের রূপায়ন এই সিরিজে পরীক্ষা করা হবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া কাপের জন্য বাংলাদেশের গ্রুপ তুলনামূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। ভারতের মতো শক্তিশালী দলের সঙ্গে থাকছে আফগানিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো চমক দেখানো দল। এই টুর্নামেন্টে সাফল্য অর্জনের জন্য প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি রাখতে চায় না বিসিবি।
এই কারণে, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজ হবে এশিয়া কাপের আগে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর এক বড় সুযোগ। সাফল্য পেলে শুধু দল নয়, গোটা ক্রিকেট ব্যবস্থাপনায়ই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সব মিলিয়ে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এই হোম সিরিজ বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য শুধুই আরেকটি আন্তর্জাতিক সিরিজ নয়—এটি বিশ্ব মঞ্চে আরও বড় চ্যালেঞ্জের আগে নিজেদের প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। নতুনদের জন্য এটি আত্মপ্রকাশের সুযোগ, আর সিনিয়রদের জন্য এটি আত্মবিশ্বাস ফেরানোর মঞ্চ। এখন দেখার বিষয়, টাইগাররা এই সুযোগ কতটা কাজে লাগাতে পারে এবং এশিয়া কাপের আগে নিজেদের কতটা প্রস্তুত করে তুলতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ