
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে মতবিরোধ নতুন কিছু নয়। তবে এই মতপার্থক্য যেন বিভাজন ও মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কারণ না হয়, সেই আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দলের সদস্যদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বুধবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত ‘বিজয় র্যালি’র আগে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই বক্তব্য দেন তারেক রহমান। তিনি এসময় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং গণতন্ত্রের গুরুত্ব নিয়ে বিশদভাবে কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, “বিভিন্ন ইস্যুতে মতভেদ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এসব মতভেদ যেন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মুখ দেখাদেখি বন্ধ হওয়ার জায়গায় না পৌঁছায়। সেই লক্ষ্যেই বলছি, জাতীয় স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ধর্ম, দর্শন, রাজনৈতিক মত যেটাই হোক না কেন—রাষ্ট্রটা আমাদের সবার। আমরা কেউ একা রাষ্ট্র চালাই না, একা রাষ্ট্র গঠন করি না।”
তিনি মনে করেন, দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে পারস্পরিক আস্থা ও সম্মিলিত নেতৃত্বই পারে বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে।
তারেক রহমান বলেন, “আজকের এই মুহূর্তে রাজনৈতিক ঐক্য জাতীয় প্রয়োজন। দলমত নির্বিশেষে আমাদের সকলের উচিত হবে, দেশের কল্যাণের জন্য এক জায়গায় আসা। কারণ গণতন্ত্রের প্রশ্নে আমরা কেউ যেন পরস্পরের প্রতিপক্ষ না হই। গণতন্ত্র শুধু একটি দলের সম্পদ নয়, এটি সমগ্র জনগণের অধিকার।”
এই সমাবেশে তারেক রহমান গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “আজ সময় এসেছে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে নাগরিকদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জনগণের প্রতি আমার আহ্বান, গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকে আর কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। অতীতে ফ্যাসিবাদের শাসন আমাদের নিরাপত্তা কেড়ে নিয়েছিল, ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল। দেশের প্রতিটি প্রান্ত বর্বর বন্দিশালায় পরিণত হয়েছিল।”
তিনি বলেন, “আজ আমাদের সামনে এক অপার সম্ভাবনা এসেছে। চব্বিশের আন্দোলনের ফলাফল হিসেবে এক নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যদি আমরা এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারি, জনগণের ভোটাধিকার এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করতে পারি—তাহলে ভবিষ্যতে আর কেউ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। দেশকে আর কেউ তাবেদার রাষ্ট্র বানাতে পারবে না। আমরা আর কোনো রক্তাক্ত চব্বিশ দেখতে চাই না।”
তারেক রহমান ‘বিজয় র্যালি’র তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “পতিত, পলাতক ফ্যাসিস্টদের আমলে এই দেশে অন্ধকার রাজত্ব কায়েম হয়েছিল। আজকের এই বিজয় র্যালি সেই অন্ধকার থেকে আলোর পথে আমাদের যাত্রার প্রতীক। এই র্যালি কেবল উদযাপন নয়, এটি প্রতিজ্ঞাও—আমরা ফিরে যাব না, আমরা পেছনে তাকাব না।”
তিনি বলেন, “জনগণের বিজয় নিশ্চিত করতে হলে রাজনীতিকে জনগণের কাছে ফিরিয়ে নিতে হবে। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হলে সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। বিশেষ করে তরুণদের, যাদের কাঁধে আজকের এবং আগামীর বাংলাদেশ।”
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ২৪ জুলাই বিএনপির নেতৃত্বে আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে ‘বিজয় র্যালি’ ও ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উদযাপন করছে দলটি। তারই অংশ হিসেবে রাজধানীজুড়ে নানা কর্মসূচির পাশাপাশি এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সংক্ষেপে মূল বক্তব্য:
-
মতভেদ থাকবে, কিন্তু মুখ ফিরিয়ে নেওয়া চলবে না
-
জাতীয় স্বার্থে ঐক্য অপরিহার্য
-
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সবাইকে সচেতন হতে হবে
-
ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে এই মুহূর্তটাই সবচেয়ে বড় সুযোগ
-
ফ্যাসিবাদ যেন আর ফিরে না আসে, সে জন্য সকলের প্রতিরোধ জরুরি
-
‘বিজয় র্যালি’ শুধু উদযাপন নয়, আলোর পথে যাত্রার প্রতীক
এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে যখন নির্বাচন নিয়ে নতুন করে সংলাপ ও ঐক্যের সম্ভাবনার আভাস মিলছে, তখন তারেক রহমানের এমন বক্তব্যকে অনেকেই ইতিবাচক রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে দেখছেন।
চলমান রাজনৈতিক সমীকরণে এটি শুধু বিএনপির অবস্থান নয়, বরং এক বৃহত্তর গণতান্ত্রিক ঐক্যের আহ্বান বলেই বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকেরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ