
ছবি: সংগৃহীত
প্রায় এক যুগ পর আবারও আলোচনার কেন্দ্রে ফিরে এলেন টালিউডের প্রাক্তন জনপ্রিয় জুটি দেব ও শুভশ্রী। সোমবার (৪ আগস্ট) রাতে কলকাতার নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠিত ‘ধূমকেতু’ ছবির ট্রেলার লঞ্চ অনুষ্ঠানে একসঙ্গে হাজির হন তারা। দীর্ঘ ৯ বছর পর এক ফ্রেমে ফিরেই দর্শকের হৃদয় জিতে নেন দুই তারকা। তবে শুধু তাদের কেমিস্ট্রিই নয়, সোশ্যাল মিডিয়া উত্তাল হয়ে ওঠে অন্য এক অপ্রত্যাশিত ঘটনায়—ভাইরাল হয়ে যায় পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর প্রাক্তন স্ত্রী শতাব্দী মিত্রর একটি আবেগঘন পোস্ট।
যেখানে দেব-শুভশ্রীর মিলনে ভক্তরা নস্টালজিয়ায় ভাসছিলেন, সেখানে শতাব্দীর পোস্ট যেন অনেক কিছু বলে দিয়ে গেল। হিন্দুস্তান টাইমসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘ধূমকেতু’র অনুষ্ঠানের ঠিক পর রাতেই ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে শতাব্দীর ওই পোস্টটি ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তের মধ্যে।
শতাব্দীর পোস্টটি ছিল এক টুকরো অনুভূতির কবিতা, যেখানে স্পষ্ট ছিল না কোনো নাম, তবে ইঙ্গিত ছিল পরিষ্কার। তিনি লেখেন— “কিরে, কেমন লাগছে? আমারও ঠিক এরকমই লেগেছিল, ঠিক এইরকমই। বুঝলে তো? হিস্টোরি রিপিটস। বুকের বাঁদিকটা চিনচিন করছে তো.... আমারও করেছিল, ঠিক তেরো বছর আগে।”
এই কয়েকটি লাইনেই যেন ফুটে উঠেছে অতীতের অভিমানের ছায়া, রেশ রয়ে গেছে কোনো পুরনো ক্ষতের। এরপর আরও একটি লেখা পোস্ট করেন তিনি: “আজ তুই যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, আমি অনেক আগেই হেঁটেছি সেই পথ ধরে। তোর এই বুকের বাঁদিকের চিনচিনে ব্যথা— আমারও খুব চেনা, ঠিক একই পথ ধরে।”
এই দুটি পোস্টে কোথাও কারও নাম না থাকলেও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা বুঝে নিয়েছেন কাহিনির ভেতরের গল্প। দেব-শুভশ্রীর সঙ্গে শতাব্দীর পোস্টকে যুক্ত করে বিশ্লেষণ করছেন অনেকে। কেউ কেউ বলছেন, এটি সরাসরি শুভশ্রীকে উদ্দেশ করেই লেখা। তবে অনেকে আবার বলছেন, পোস্টটি রাজকে লক্ষ্য করেই লেখা, কারণ ঘটনাক্রমে ঠিক এমন একটি সময়েই তার জীবনে এসেছিলেন নতুন প্রেম।
২০০৬ সালে পরিচালক রাজ চক্রবর্তী প্রথম বিয়ে করেন শতাব্দী মিত্রকে। তখনো রাজ টালিউডে প্রতিষ্ঠিত নন। ২০০৮ থেকে একটু একটু করে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু সেই সময়েই দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল ধরে। অবশেষে ২০১১ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এরপর রাজের জীবনে একে একে এসেছেন অভিনেত্রী পায়েল সরকার, মিমি চক্রবর্তী, এবং সবশেষে শুভশ্রী গাঙ্গুলি।
২০১৮ সালে রাজ-শুভশ্রীর বিয়ে হয়, যা ছিল টলিউডের সবচেয়ে আলোচিত বিবাহের একটি। বর্তমানে তারা সুখী দম্পতি এবং দুই সন্তানের মা-বাবা। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বলছে, রাজের অতীত জীবন এখনও কিছু জায়গায় রয়ে গেছে অমীমাংসিত ও আবেগঘন।
‘ধূমকেতু’ দেবের নিজস্ব প্রযোজনায় নির্মিত একটি ছবি। বহুবার নানা কারণে মুক্তি পিছিয়ে যাওয়া এই ছবিটি অবশেষে মুক্তি পাচ্ছে। শুভশ্রীর সঙ্গে এটি তার বহুদিন পর কোনো স্ক্রিন শেয়ার। তাদের ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘পরান যায় জ্বলিয়া রে’ কিংবা ‘খোকাবাবু’ সিনেমাগুলো এখনো ভক্তদের মনে অমলিন। তবে বাস্তব জীবনে তারা আলাদা হয়ে গিয়েছেন অনেক আগেই।
দেব এখন অভিনেত্রী রুক্মিণী মৈত্রের সঙ্গে সম্পর্কে, অন্যদিকে শুভশ্রী সংসার করছেন রাজের সঙ্গে। তবুও তাদের একসঙ্গে মঞ্চে ওঠা নিয়ে তৈরি হয় আলোড়ন। কেউ কেউ এই মিলনকে দেখছেন শুধুই পেশাদারিত্বের অংশ হিসেবে, কেউ আবার খুঁজছেন পুরনো সম্পর্কের গন্ধ। এই অবস্থায় শতাব্দীর পোস্ট যেন আরও আলোড়ন তোলে।
শতাব্দীর পোস্ট ঘিরে নেটিজেনরা ভীষণই সরব। কেউ লিখেছেন, “একটা মেয়ের অভিমান এমনই হয়, সময়ের পর সময় চলে গেলেও তার বুকে চিনচিন করে,” আবার কেউ লিখেছেন, “রাজ একসময় যেভাবে শতাব্দীকে ফেলেছিলেন, আজ তারই প্রতিচ্ছবি হয়তো অন্য কারও জীবনে দেখা যাচ্ছে।”
আরও কেউ কেউ বলছেন, এই পোস্ট হয়তো রাজের জন্যই লেখা, কারণ দেব-শুভশ্রীর পুনর্মিলন যেমন আলোচনার বিষয়, তেমনি রাজের বর্তমান অবস্থানও নজর কেড়েছে।
ঘটনার পর রাজ, শুভশ্রী, দেব কিংবা রুক্মিণী কেউই এখনো শতাব্দীর পোস্ট নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় হাজার হাজার মানুষ প্রতিটি আপডেট খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন—কে কাকে ফলো করছে, কে কাকে ব্লক করেছে, কিংবা কে কী পোস্ট করছে।
গতকালই এ নিয়ে হালকা কৌতূহল তৈরি হয়েছিল শুভশ্রীর একটি সাক্ষাৎকারে, যেখানে তিনি বলেছিলেন—“ইনস্টাগ্রামে কে কাকে আগে ব্লক করেছিল সেটা আজ আর গুরুত্ব পায় না। সময় বদলে দিয়েছে সব কিছু।”
টালিউডে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও পেশাদার জগতের সংযোগ বরাবরই বিতর্ক আর গসিপের খোরাক জুগিয়েছে। দেব-শুভশ্রীর মিলন যেমন নতুন কনটেন্ট এনে দিয়েছে, শতাব্দী মিত্রের পুরনো ক্ষতও যেন নতুন করে আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছে। এই মুহূর্তে টালিউডের আকাশজুড়ে তাই রোমান্স, স্মৃতি, অভিমান আর পুনর্মিলনের আবহ।
একদিকে পর্দায় আলো ছড়াচ্ছে নতুন সিনেমা ‘ধূমকেতু’, অন্যদিকে বাস্তব জীবনের নাট্য মঞ্চে চলেছে সম্পর্কের অদৃশ্য টানাপড়েন। নাটকীয়তা এখানেই শেষ নয়—কারণ, টলিউডে ‘হিস্টোরি রিপিটস’ বলেই তো!
বাংলাবার্তা/এমএইচ