
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের সংগীত অঙ্গনে একের পর এক ব্যক্তিগত ঘটনা নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে। জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী দিলশাদ নাহার কনার বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা এবং তার পরপরই সংগীতশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সির তীব্র কটাক্ষপূর্ণ স্ট্যাটাস নতুন করে বিতর্ক উস্কে দেয়। আর সেই বিতর্কের মাঝে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দিবাগত রাত ৪টার দিকে ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশ করে নিজের অবস্থান জানিয়ে আলোচনায় এলেন সংগীতশিল্পী সালমা আক্তার। যদিও তিনি সরাসরি কোনো নাম উল্লেখ করেননি, তবে তার বক্তব্যে ইঙ্গিত স্পষ্ট যে, তিনি কনার পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং ন্যান্সির আচরণে হতাশ হয়েছেন।
২৫ জুন রাতে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনা তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি আবেগঘন পোস্টে জানান, “জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে—সবই আল্লাহর ইচ্ছা। ঠিক তেমনি যেকোনো বিচ্ছেদও হয় তাঁরই ইশারায়।” কনা আরও জানান, দীর্ঘ ছয় বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টেনে তিনি ও তার স্বামী গোলাম মোহাম্মদ ইফতেখার গহিন ১৬ জুন ২০২৫ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহবিচ্ছেদ করেছেন।
এই ঘোষণার মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। কনার ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি ভক্তদের আগ্রহ তো ছিলই, সেই সঙ্গে সংগীতজগতের ভেতরের মানুষরাও এ নিয়ে নিজেদের মতামত জানাতে শুরু করেন।
কনার ঘোষণার ঠিক এক ঘণ্টার মধ্যে সংগীতশিল্পী ন্যান্সি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন, যা বেশ কটাক্ষপূর্ণ এবং ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করেন অনেকেই। সেখানে তিনি লেখেন, “জন্ম মৃত্যু বিয়ে বিচ্ছেদ; এর সবই আল্লাহর ইচ্ছায় হয়—বাণীতে শেয়াল রাণী।”
ন্যান্সির এই স্ট্যাটাস অনেকেই ব্যক্তিগত বিদ্বেষমূলক এবং অশোভন বলে উল্লেখ করেন। কেউ কেউ বলেন, কনার পোস্টকে ব্যঙ্গ করতেই এ ধরনের স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।
সবার দৃষ্টি তখন ন্যান্সির দিকে ঘোরানো, ঠিক এমন সময়ই আবির্ভাব ঘটে সংগীতশিল্পী সালমা আক্তারের। রাত গভীর হলেও সালমা তার ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও বার্তা শেয়ার করেন, যেটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে।
ভিডিওতে সালমা বলেন: “কিছু কিছু বিষয়ে আমার চুপ থাকতেই ভালো লাগে। আমি সবার কাছ থেকে শিখতে পছন্দ করি। আমার কাছে বলার থেকে শেখাটা বেশি জরুরি।”
এরপর আরও বলেন: “মাঝে মাঝে খারাপ লাগে, যখন দেখি অন্য পেশার মানুষ—যেমন ডাক্তার, আইনজীবী—তাদের কেউ বিপদে পড়লে বাকিরা একজোট হয়ে পাশে দাঁড়ায়। অথচ আমাদের শিল্পীদের মধ্যে এমনটা দেখি না। কেউ বিপদে পড়লে অনেকেই চুপ থাকে, আর কেউ কেউ মজা নেয়!”
এই কথাগুলোর মাধ্যমে তিনি একদিকে কনার দুঃসময়ে সংগীতাঙ্গনের নীরবতা নিয়ে কষ্ট প্রকাশ করেছেন, অন্যদিকে সম্ভবত ন্যান্সির কটাক্ষপূর্ণ স্ট্যাটাসের প্রতিও সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে, তীব্র ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সালমা আরও বলেন, “শিল্পীরা একটি পরিবার। কিন্তু যখন কেউ বিপদে পড়ে এবং তখন পরিবারের মতো অন্য শিল্পীরা পাশে না থাকে, তখন সে মানুষের জীবনে আর কিছুই থাকে না। এটা খুব কষ্টদায়ক।”
সালমার এই মন্তব্য বহু নেটিজেন এবং সংগীতপ্রেমীর হৃদয়ে দাগ কাটে। অনেকেই মন্তব্য করেন, সালমার বক্তব্যে একটি গঠনমূলক বার্তা রয়েছে—শিল্পীদের পারস্পরিক সহানুভূতি এবং সমর্থন প্রয়োজন, বিশেষত যখন কেউ ব্যক্তি জীবনে সংকটে থাকে।
সালমার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পরই মন্তব্যের বন্যা বয়ে যায়। অনেকেই তাকে ধন্যবাদ জানান মানবিকতার স্বর হয়ে কথা বলার জন্য। কেউ কেউ লেখেন, “আজকের দিনে সালমার মতো সরল এবং সত্যভাষী শিল্পীই সমাজের দর্পণ।”
অন্যদিকে, কিছু নেটিজেনের মন্তব্যে স্পষ্ট হয় যে, তারা সালমার বক্তব্যকে ন্যান্সির বিরুদ্ধে একটি সুস্পষ্ট জবাব হিসেবে নিয়েছেন।
এদিকে কনার বিচ্ছেদ ঘিরে গুঞ্জনের অন্ত নেই। অনেকেই দাবি করছেন, এক জনপ্রিয় ব্যান্ডের গিটারিস্টের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কই এই ভাঙনের অন্যতম কারণ। যদিও কনা এ বিষয়ে সরাসরি কিছু বলেননি। তবে নেটিজেনদের একটি বড় অংশ কনার প্রতি সহানুভূতিশীল, এবং মনে করছেন তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে যেভাবে ট্রল বা ব্যঙ্গ করা হচ্ছে, তা অমানবিক।
এই ঘটনায় আরও একটি প্রশ্ন সামনে এসেছে—বাংলাদেশের সংগীত শিল্পীদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধন আসলেই কতটা দৃঢ়? যখন কারও সাফল্য আসে, তখন প্রশংসা পাওয়া সহজ হলেও, ব্যর্থতা বা ব্যক্তিগত বিপর্যয়ে কজন শিল্পী পাশে দাঁড়ান? সালমার বক্তব্য সেই প্রশ্নই উসকে দিয়েছে নতুন করে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ