
ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ এশিয়ায় ফের যুদ্ধের কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে। মঙ্গলবার রাতের অন্ধকারে ভারত একটি আকস্মিক সামরিক অভিযান চালায় পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের এই অভিযানের পর পাকিস্তান কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় এবং দাবি করে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। পাল্টা প্রতিরোধে প্রস্তুত থাকার ঘোষণা দেয় ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে, ভারতের সামরিক আগ্রাসনের জবাবে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং দেশটির সরকার তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে প্রতিরোধমূলক প্রতিক্রিয়া জানাতে।
এই যুদ্ধাবস্থা শুধু দুই চিরবৈরী প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনে। দুই দেশের উত্তেজনার মধ্যে পড়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। কারণ, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জাতীয় ও যুব দল দুই দেশেই প্রতিনিধি পাঠিয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে।
পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশের উদীয়মান দুই তারকা—লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন (লাহোর কালান্দার্স) ও পেসার নাহিদ রানা (পেশোয়ার জালমি)। ইতোমধ্যে কাশ্মীর সীমান্তে গোলাগুলির খবর সামনে আসায় পাকিস্তানজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। একমাত্র সামান্য ভুল বোঝাবুঝিও এই মুহূর্তে বড় ধরনের সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। আর ঠিক এই পরিস্থিতিতেই দুই বাংলাদেশি ক্রিকেটারের নিরাপত্তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে, যার কারণে গভীর উদ্বেগে রয়েছে বিসিবি।
বিসিবি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “গত ২৪ ঘণ্টার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। পাকিস্তান সুপার লিগে অংশগ্রহণকারী দুই বাংলাদেশি ক্রিকেটারের—রিশাদ হোসেন ও নাহিদ রানার—নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের এই মুহূর্তে প্রধান দায়িত্ব। আমরা নিয়মিত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ ব্যক্তিগতভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং পিএসএলের প্রধান নির্বাহী সালমান নাসিরের সঙ্গেও সমন্বয় করছেন।”
ফারুক আহমেদ বলেন, “আমরা এখনো অপেক্ষায় আছি। পরিস্থিতির কী গতি হয়, সেটা দেখতে আরও তিন-চার দিন সময় নিতে পারি। তবে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে আমাদের দুই ক্রিকেটার যেন মানসিকভাবে শান্ত থাকেন এবং নিরাপদে থাকেন।”
পিএসএলের ফাইনাল হওয়ার কথা ১৮ মে। এর ঠিক পরেই বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার পর পাকিস্তানে ঢুকবে দলটি। তবে বিসিবির সূত্র জানিয়েছে, যদি পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অবনতি ঘটে, তাহলে সংযুক্ত আরব আমিরাতেই পাঁচ ম্যাচের সিরিজ খেলার প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। সূচি অনুযায়ী, পাকিস্তান সফরের দিন নির্ধারিত রয়েছে ২১ মে।
অন্যদিকে ভারতেও রয়েছে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব। সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে বাংলাদেশের যুব ফুটবল দল মঙ্গলবার পৌঁছেছে ভারতের অরুণাচল প্রদেশে। যদিও ভৌগোলিকভাবে অরুণাচল প্রদেশ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে অনেক দূরে, তবে ভারতের অভ্যন্তরে যে কোনো সময় যুদ্ধ পরিস্থিতি ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাফুফের সহসভাপতি ও ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাদেহী বলেন, “যেখানে যুদ্ধ শুরু হয়েছে সেখান থেকে অরুণাচল অনেক দূরে। এখন পর্যন্ত যুদ্ধের কোনো প্রভাব সেখানে পড়েনি। তারপরও আমরা সতর্ক আছি। কারণ পরিস্থিতি যেকোনো মুহূর্তে বদলে যেতে পারে। ছেলেদের দিকে আমাদের নজর আছে। প্রতিনিয়ত খোঁজ নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত সব কিছু স্বাভাবিক।”
উল্লেখ্য, টুর্নামেন্টের ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল মালদ্বীপ ও ভুটানের বিপক্ষে যথাক্রমে শুক্রবার ও রোববার খেলবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত-পাকিস্তানের এই সংঘাত যদি প্রকৃত অর্থে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে রূপ নেয়, তাহলে তার প্রভাব শুধু কূটনৈতিক বা সামরিক অঙ্গনেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার ক্রীড়াঙ্গন, বাণিজ্য এবং সাধারণ মানুষের ওপরও পড়বে গভীরভাবে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলো যাদের উভয় দেশের সঙ্গে ক্রীড়াক্ষেত্রে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে, তারা এই ধরনের পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়ে। এ কারণেই বিসিবি ও বাফুফে এখন সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশের দুই প্রতিভাবান ক্রিকেটার এবং যুব ফুটবলারদের যেন নিরাপত্তা ও মানসিক স্বস্তির পরিবেশে প্রতিযোগিতা করতে দেওয়া হয়—এটাই এখন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের প্রধান চাওয়া। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে জরুরি ভিত্তিতে প্রত্যাহার বা বিকল্প ভেন্যু চিন্তা করতে হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই মুহূর্তে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে যেকোনো সময় পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে পারে, আর সেটিই বাংলাদেশ ক্রীড়া প্রশাসনের জন্য হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ