সাকিব আল হাসান
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা। এই দলটির বিপক্ষে জিতলে বাড়তি আনন্দ ও বাড়তি পাওয়াও তালিকায় যোগ হবে। কিন্তু আজ জিতলেও বাংলাদেশের এশিয়া কাপ অভিযান নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার সুযোগ আছে কি? উত্তর অবশ্যই না। তবুও শেষটা ভালো করাই লক্ষ্য বাংলাদেশের। অনেক অপূর্ণতার মধ্যে ভারতের বিপক্ষে এই ম্যাচ জিতে অর্জনের ছাপ রাখতে চান সাকিব আল হাসান।
ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে জোর গলায় জানিয়ে গেলেন অধিনায়ক। আজকের ম্যাচে জয় ছাড়া আর কিছুই বাংলাদেশ দলের মাথাই নেই।
দৃপ্ত শপথ সত্ত্বেও নিশ্চিন্তে থাকার সুযোগ হয়তো নেই। ইনজুরি-অসুস্থতায় এই আসরে শুরু থেকেই জবুথবু বাংলাদেশ। এশিয়া বা বিশ্বকাপের চিন্তার বাইরে থাকা ক্রিকেটারকেও ডেকে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ওপেনিং ও সাত নম্বরে নিয়ে চিন্তা তো আছেই। তার ওপর ব্যাটিংয়ে দলের পুরনো দৈন্যদশা চলছে। মাত্র এক ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মেহেদী হাসান মিরাজের জোড়া সেঞ্চুরিতে তিনশো ছাড়ানো স্কোর বাদে ব্যাটারদের অর্জন সামান্য।
এই অবস্থায় অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমও আজ নেই। মিডলঅর্ডারে অভিজ্ঞতার ঝাঁপি মেলে ইনিংস বড় করার দায়িত্বটা এখন কে পালন করবেন?
মুশফিক না থাকায় দলে একটা পরিবর্তন তো আসবেই। ওপেনিংয়ে ব্যর্থ নাঈম শেখ আবারও সুযোগ পান কি না সেটাও একটা প্রশ্ন। এছাড়া সাত নম্বরের একমাত্র চয়েজ মিরাজকে ওপেনিংয়ে পাঠিয়ে সাময়িক পরিত্রাণ খোঁজা হবে কি আজও?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর সত্যিই নেই সাকিবের কাছে। ঠিক তেমনি নিচের দিকে শামিম-আফিফ নাকি একজন বাড়তি বোলার কোন পথে সমাধান খুঁজবে বাংলাদেশ তাও জানেন না সাকিব।
ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন, ‘আসলে পিচের ওপর সবকিছু নির্ভর করছে। যদি ভালো উইকেট হয় তাহলে তেমন কিছু নাও হতে পারে। আবার স্পিনিং উইকেট হলে হতেও পারে। আমাদের মুক্তচিন্তা নিয়ে যেতে হবে। খেলা শুরুর পরে আসলে ভালোভাবে বোঝা যাবে। এর আগে শুধু ধারণাই করা যাবে। আসলে কম্বিনেশনে স্পিন থাকবে। শেষ ৩-৪ ম্যাচে স্পিনাররা সুযোগ পাচ্ছেন।’
পিচের ওপর অবশ্যই অনেক কিছু নির্ভর করছে। কলম্বোয় সুপার ফোরে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের আগ পর্যন্ত তিন ম্যাচেই আগে ব্যাট করা দল জিতেছে। ভারতের বিপক্ষে টস জিতলে অবশ্যই আগে ব্যাট করতে চাইবে বাংলাদেশ।
আগে ব্যাট করলেও দলের ব্যাটিং লাইনের এই ভঙ্গুর অবস্থায় ভারতের মোকাবিলা করা কতটা কঠিন হবে তাও সঠিক বলতে পারেননি সাকিব, ‘এটা তো খেলার পরে বলতে পারব। খেলার আগে কীভাবে বলব সহজ হবে না কঠিন হবে। আমরা যাব যাতে যতটা সম্ভব ভালো খেলা যায় জেতার জন্য, বাকিটা আসলে খেলার পরে আপনারাই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।’
ভারত শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে এমনিতেই কঠিন। তবুও গত বছর দলটির বিপক্ষে ঘরের মাঠে ২-১ এ সিরিজ জয়ের সুখস্মৃতি কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ। সাকিবদের জন্য এই সময়ে ওই সিরিজ জয়ের সুখস্মৃতিটাই একমাত্র ভরসা।
সেই ভরসাতেই জয় ছাড়া ভিন্ন চিন্তা করছেন না সাকিব, ‘আপনি নামলে কী করতেন? (প্রশ্নের জবাবে) আমরাও সেটাই করব (জয়ের জন্য)। না চাওয়া পাওয়ার আছে অবশ্যই (শেষ ম্যাচ থেকে)। যদি আমরা শেষ ম্যাচ জিতে দেশে যেতে পারি সেটা আমাদের জন্য ভালো দিক হবে। এই ম্যাচ থেকে অন্য কিছু চাই না, এই ম্যাচ থেকে শুধু জিততেই চাই।’
সাকিবরা জয়ের একমাত্র লক্ষ্য নিয়ে নামছে এই ম্যাচে। ভারতের অবশ্য এই চাপ নেই। ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করে ফেলায় এই ম্যাচে বেঞ্চের ক্রিকেটারদের সুযোগ দিতে পারে ভারত। ফাইনালের আগে তাই কিছু জায়গায় ইনজুরি থেকে ফেরা ক্রিকেটারদের বিশ্রাম দিতে চাইবে তারা। সেক্ষেত্রে আজ একাদশে নাও থাকতে পারেন জাসপ্রিত বুমরাহ ও লোকেশ রাহুল। তাদের জায়গায় মোহাম্মদ সামি ও শ্রেয়াস আয়ারের সুযোগ হতে পারে। এছাড়া কুলদীপ যাদব বা অক্ষর প্যাটেলের জায়গায় পেস বোলিং অলরাউন্ডার শার্দুল ঠাকুরকেও একাদশে রাখতে পারে ভারত।
দল যেমনই হোক এমনিতেই এগিয়ে থাকবে ভারত। বড় টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের রেকর্ডও ভালো তাদের। তবুও দলটির বোলিং কোচ পরশ মামব্রে জানালেন বাংলাদেশকে খাটো করে দেখছেন না মোটেও।
গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের কাছে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারের কথাটা নিশ্চয়ই মনে আছে মামব্রেদের। তাদের এই সম্মান কাজে লাগিয়ে এবারের এশিয়া কাপের শেষটা রাঙাতে পারেন সাকিবরা।